পরীক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে নিরাপদে পরীক্ষা দিতে পারে

আর মাত্র এক সপ্তা বাকি। ২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে শুরু হবে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা। এ বছর এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী। এ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তাদের অভিভাবকরা। দেশের বিবদমান, অসুস্থ রাজনীতির বলির পাঠা হচ্ছে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস হচ্ছে না। দেশের সবকিছুর মতোই জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা।

একজন বিশিষ্ট দার্শনিক বলেছিলেন, মানুষ রাজনৈতিক জীব। কারণ রাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ পূরণ করা, হরণ কিংবা ক্ষুণ্ণ করা নয়। কিন্তু আমরা আমাদের দেশে রাজনীতিকে দেখছি ঠিক তার উল্টো ভূমিকায়। এদেশের রাজনীতি মানুষের অধিকার পূরণে ভূমিকা তো রাখছেই না বরং অধিকার হরণ এবং ক্ষুণ্ণই শুধু নয়, এমনকি জীবনের জন্যও হয়ে উঠছে বিপজ্জনক! হন্তারক, অপ্রকৃতিস্থ এ রাজনীতির করাল গ্রাসে পড়েছে শিক্ষা। যেকোনো কাজ বা কর্মসূচি সম্পন্ন হয়ে থাকে নির্দিষ্ট সময়ে; অনির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকতে পারে না। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষাও একটি সুনির্দিষ্ট রুটিনবদ্ধ শিক্ষা কর্মসূচি। এটি যাতে নির্বিঘ্নে এবং নিরাপদে অনুষ্ঠিত হয় সে দায়িত্ব সবার। কিন্তু দেশের বিদ্যমান অসুস্থ রাজনীতির কোনোপক্ষই সে দায়িত্ব পালনে কিংবা স্বীকারে আগ্রহী নয়। ফলে ক্রসফায়ারের সম্মুখিন সারাদেশের অসহায় অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী সমাজ। বিরোধী রাজনৈতিক জোট এক অনির্দিষ্ট অবরোধ এবং হরতাল কর্মসূচি জারি করেছে। এ কর্মসূচি তাদের রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকদের কাছেই স্পষ্ট নয়, স্বচ্ছ নয়। হরতালের যেমন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়- ২৪, ৪৮ কিংবা ৭২ ঘণ্টার- তেমন কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই অবরোধ কর্মসূচির। আবার অবরোধের আওতায় কী কী পড়বে বা পড়বে না, তারও কোনো দিকনির্দেশনা নেই। এ রকম অনির্দিষ্ট কর্মসূচি থেকে সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানো কি মোটেও সম্ভব?

আমরা বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ন্যূনতম প্রজ্ঞা আশা করি। শুধু কোনো একজন ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করে আত্মমর্যাদাহীন, তোষামুদে এবং মোসাহেবীর যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি চলছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর, সেই নেতানেত্রীই দেশ এবং দেশের মানুষকে জীবন্ত দগ্ধ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বোমাবাজ ব্যক্তিদের ধরে তাদের হাত পুড়িয়ে দিলেই তা নির্মূল হবে না- এমন অসুস্থ চিন্তা যে মাথা থেকে প্রসূত, সেই মাথা থেকে এ অসুস্থ চিন্তাকে সমূলে উৎপাটিত করে পুড়িয়ে দিতে হবে। সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়ে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের জনগণ অসুস্থ রাজনীতির শিকার। আমরা রাজনীতিকরা অসুস্থ। আমাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতি তার এ স্বীকারোক্তিকে সর্বাংশে সত্য বলে প্রতিপন্ন করছে। যারা জাতির ভবিষ্যত নির্মাণ করবে, গড়ে তুলবে এ দেশ; সেই তারা যেন নির্বিঘ্নে, নিরাপদে পরীক্ষা দিতে পারে, সেজন্য সব রাজনৈতিক নেতার কাছে আমরা করজোড়ে আবেদন জানাই- আমাদের ভবিষ্যতকে বাঁচান। আমাদের দেশকে বাঁচান।