হয়রানি নিরসনে উদ্যোগ যেন কার্যকর হয়

 

ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটন ছাড়া অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ভারতের ভিসা পেতে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখ ছাড়াই আবেদন করা যাবে। এতে ভারতের ভিসা পেতে প্রার্থীদের হয়রানি কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমান নিয়মে ভারতের ভিসা প্রার্থীদের কতোটা হয়রান হতে হয়, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। ভিসা প্রার্থীদের ই-টোকেন পেতেই দেড় থেকে দু মাস লেগে যায়। ই-টোকেন পাওয়ার পর প্রার্থীকে ভিসার আবেদনপত্র জমা দেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। সেখানে রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। তারা টাকার বিনিময়ে আবেদনপত্র দ্রুত জমা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। অন্যথায় ভোগান্তি অবধারিত। আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট গ্রহণের ক্ষেত্রেও প্রার্থীদের আরেক দফা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। সেখানেও দালালদের দৌরাত্ম্য। অর্থাৎ অনিয়মের মধ্যদিয়ে দ্রুত পাওয়া যায় ভিসা। পার্শ্ববর্তী দেশের ভিসা প্রাপ্তি নিয়ে এ হয়রানি দুর্ভাগ্যজনক।

এ বাস্তবতায় ভারতীয় হাইকমিশন অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখ ছাড়াই ভিসা আবেদনের ব্যবস্থা নিয়েছে, এটি স্বস্তিদায়ক। এ পদক্ষেপ যেন যথাযথ কার্যকর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত সফরে যায়। তাদের একটি বড় অংশ যায় চিকিৎসার জন্য। ভিসা প্রাপ্তিতে হয়রানির ধকল সহ্য করতে হয় তাদেরও। প্রচলিত নিয়মের অবসান হলে মানুষের এ হয়রানি যেমন বন্ধ হবে, তেমনি দু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে মানুষের চলাচল আরও বাড়বে। আমরা মনে করি, ব্যক্তি পর্যায়ের আদান-প্রদান দু দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বস্তুত সার্কভুক্ত দেশগুলোর জনগণের জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণের প্রতিবন্ধকতাগুলো আরও শিথিল এবং ক্রমান্বয়ে দূরীভূত হওয়া উচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কোনো কোনো আঞ্চলিক জোটভুক্ত দেশের জনগণের এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণে কোনো ভিসার দরকার হয় না। সেক্ষেত্রে সার্ক প্রতিষ্ঠার ২৯ বছর পরও এ অঞ্চলের মানুষকে জোটভুক্ত অন্য দেশে ভ্রমণে হয়রানির শিকার হতে হলে এ জোটের সার্থকতা কোথায়? এ বাধা নিরসনে প্রথমত জোটের বৃহত্তম দেশ ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে।

ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো আরও বেশি শিথিল হওয়াই কাম্য। কারণ অনেকেরই নিকট-আত্মীয় উভয় দেশে বসবাস করে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে একই ভাষাভাষী মানুষের বাস। আমরা মনে করি, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখা প্রয়োজন।