সৌদি শ্রমবাজার খুলছে : দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি নিশ্চিত করুন

বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। স্বভাবত কারণেই দেশের জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে না পারলে তার প্রভাব সার্বিক অর্থেই নেতিবাচক হবে। ফলে বিশ্বে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করে এ জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া এবং একই সাথে তা রপ্তানি বৃদ্ধি- দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বলেই মনে করা সঙ্গত।

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার ওপর গত সাত বছর যে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিলো তা শিগগিরই তুলে নেয়া হবে। আর তা জানিয়েছে খোদ সৌদি আরব সরকার। গত বুধবার মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফকিহকে উদ্ধৃত করে এ খবর প্রকাশ করেছে। তথ্যমতে, সৌদি আরব সফররত প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সাথে সৌদি সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও হয়েছে এবং শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো যাবে। আমরা মনে করি, সৌদি সরকার বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য তাদের শ্রমবাজার যখন উন্মুক্ত করছে, তখন সেই সুযোগকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তবে তা দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এটা উল্লেখ্য যে, সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করেন এবং তা সুনামের সাথেই। আর আরব বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সংখ্যাও প্রচুর। মাঝখানে এতো বছর বন্ধ থাকার পরও আবার যখন সৌদি সরকার আগ্রহ প্রকাশ করছে, স্বভাবত কারণেই সরকারের উচিত হবে জরুরি ভিত্তিতে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা। কেননা দক্ষ শ্রমিক রপ্তানির অর্থই হলো সুনাম বৃদ্ধি পাওয়া। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শ্রমিকরা যতো বেশি তাদের সততা ও কাজের মাধ্যমে দেশের সুনামকে বৃদ্ধি করতে পারবেন, ততো বেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবে; যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসঙ্গত আমরা উল্লেখ করতে চাই- বিভিন্ন সময়ই প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে সব শ্রমিকের ওপরই। আমরা চাই এসব ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি রোধ হয়। সেক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রাখা ও তদারকিতে সরকার দেশে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশনগুলোকেও নির্দেশনা দিতে পারে। এটা মনে রাখা দরকার, যখন কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে জড়িয়ে পড়ে, তার নেতিবাচক প্রভাবে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে জনসম্পদ রপ্তানিতে ধস নামে। এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে- সৌদি আরবের কোনো কোনো খাতে কিভাবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক নিলে দু দেশই লাভবান হবে, সে বিষয়ে একটি কর্মকৌশল ঠিক করার ওপরও জোর দিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফকিহ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সরকারকে বলতে চাই- শ্রমিক রপ্তানিতে দক্ষ শ্রমিক বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে যতো বেশি দক্ষ শ্রমিক পাঠানো যাবে ততোই তা দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। সর্বোপরি আমরা চাই- শ্রমবাজার সৃষ্টি ও তা ধরে রেখে দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে সরকার আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। প্রয়োজনে বিভিন্নভাবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি, প্রেষণাদান, উপযুক্ত পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করতে হবে। কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি বা অসদুপায়ে যেন অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়া এবার সৌদি আরবে যাওয়ার আগে আগ্রহীরা নিজ দেশে যেন প্রশিক্ষণ পায় এবং স্বচ্ছতার সাথে তাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় সেই ব্যবস্থাও জরুরি। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সুনাম প্রতিষ্ঠিত আছে। ফলে তা ধরে রাখতে পারলে বিভিন্ন দেশ শ্রমিক আমদানিতে আরো বেশি আগ্রহ দেখাতে পারে। সরকার এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে শ্রমবাজারকে প্রসারিত করতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এমনটি প্রত্যাশিত।

Leave a comment