যৌতুকের দাবিতে হত্যার অভিযোগ : আজ ময়নাতদন্ত

আলমডাঙ্গা রুতনপুরের গৃহবধ পারভীনার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার রুথতনপুর শান্তিপাড়ার গৃহবধূ পারভীনা খাতুনের (২৬) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পিতার পরিবার অভিযোগ করলেও স্থানীয় মানুষ মৃত্যুর বিষয়টি রহস্যজনক হিসেবেই দেখছেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণের লক্ষ্যে থানায় রেখেছে। গৃববধূ পারভীন খাতুন ওই গ্রামের কৃষক ইছানুর রহমানের স্ত্রী। তিনি দু সন্তানের জননী।

জানা গেছে, গতকাল সকালে পুরুষ মানুষগুলো পেশাগত কাজে বাড়ির বাইরে যায়। গৃহিণীরাও ছিলেন যে যার মতো ব্যস্ত। এমন এক মুহূর্তে নিজ ঘরের শয়নকক্ষের আড়ায় পারভীনাকে ঝুলতে দেখেন তার শাশুড়ি মকলেছার খাতুন। তিনি জানান, পারভিনার দু বছর বয়সী মেয়ে তামান্নার কান্না শুনে তিনি ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে ঝুলন্ত দেখতে পান। প্রতিবেশীদের সহায়তায় তাকে ঘরের আড়া থেকে নামানো হয়। কিন্তু ততোক্ষণে পারভীনা চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে পারভীনার পিতা আসমানখালী গ্রামের শফিকুল ইসলাম কালুসহ তার বাড়ির লোকজন জামাই বাড়িতে ছুটে আসেন। তিনি অভিযোগ করেন, ৭/৮ বছর আগে ইছানুরের সাথে তার মেয়ে পারভীনার বিয়ে হলেও দাম্পত্য জীবনে শান্তি ছিলো না। বিয়ের সময় যৌতুকের কোনো প্রতিশ্রুতি ছিলো না। তারপরেও ইছানুর ও তার পরিবার বিয়ের কিছুদিন পরে যৌতুক দাবি করেন। এনিয়ে মনোমালিন্য হলে পারভীনা পিতার বাড়িতে চলে যান। সিদ্ধান্ত গড়ায় ডিভোর্সের দিকে। কিন্তু জামাই ও তার পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে পুনরায় আত্মীয়তা করতে সম্মত হন শফিকুল। স্বামীর বাড়িতে কিছুদিন ভালো কাটলেও আবারে যৌতুকের দাবিতে পারভীনার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে তবুও যৌতুকের দাবি ছাড়েনি ইছানুরের পরিবার। এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই পিতার বাড়িতে অবস্থান করতেন পারভীনা। গত কয়েকদিন আগে পিতার সংসার থেকে পৃথক হতে স্বামীর কাছে অনুরোধ জানায় পারভীনা। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবারো কলহ শুরু হয়। শাশুড়ির সাথেও তার মনমালিন্য চলছিলো। গতকাল শুক্রবার তার শাশুড়ি তাকে পৃথক করে দেয়। এসব বিরোধ এবং যৌতুকের দাবিতে পারভীনাকে স্বাসরোধ করে হত্যা করে আত্মহত্যা সাজানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে থানায় হত্যা মামলা করা হবে।

তবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন আছানুরের পরিবার। পারভীনার শাশুড়ি আরো জানিয়েছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহের জের ধরে পারভীনা গলায় ওড়না জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করছেন তারা। এদিকে নিহতের পিতার মৌখিক অভিযোগের বিষয়ে লাশ থানায় আনা হয়েছে জানিয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) এসএম নাজমুল হক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য আজ চুয়াডাঙ্গা হাসাপাতালমর্গে লাশ প্রেরণ করা হবে। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে হত্যা মামলা হতে পারে।