বিদেশে অপপ্রচার সম্পর্কে সতর্ক থাকুন

স্টাফ রিপোর্টার: বিদেশে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সাথে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিশেষ করে বিদেশে মিশনে কর্মরতদের দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা এবং প্রবাসীদের প্রতি সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বিদেশে মিশনে কর্মরত কূটনীতিকদের সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে ব্যবসা বৃদ্ধি, বাণিজ্যের নতুন সুযোগ খুঁজে বের করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রয়াস চালানোরও আহ্বান জানান। একই সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। কাজের গতিশীলতার লক্ষ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে গতকাল তিনি এ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, কূটনীতি হচ্ছে টিমওয়ার্ক। তা কেবল অন্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যেই আবদ্ধ নয়; বরং এ দায়িত্ব ব্যবসা-বাণিজ্যের খাতে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং দেশের রপ্তানি ও অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ পর্যন্ত সম্প্রসারিত। ৮০ থেকে ৯০ লাখ বাংলাদেশি, যাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি সতেজ হচ্ছে, তাদের অবদান মনে রাখতে কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অবহেলিত হওয়া উচিত নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কূটনীতিকদের প্রবাসীদের সমস্যার কথা ধৈর্যসহকারে শুনতে হবে এবং তার সমাধান করতে হবে। প্রবাসীদের সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে হবে। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বক্তব্য দেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যথাযথ অভিবাসন কাগজপত্রের অভাবে প্রবাসীরা যেন কোনো রকম সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পাসপোর্টধারীদের যাচাইয়ের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টিম পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনশক্তি রপ্তানির জন্য স্বচ্ছ ব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছে। স্মার্ট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা একজন ব্যক্তি সম্পর্কে সব তথ্যের জোগান দেবে। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ যেন বিদেশে যেতে না পারে, সে পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এখন প্রবাসীদের প্রয়োজন দূতাবাসে কর্মরতদের পক্ষ থেকে ভালো ব্যবহার। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একদল চক্রান্তকারী দেশের ইতিবাচক বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে এই অসৎ উদ্দেশ্যগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই আরো সক্রিয় থাকতে হবে। তিনি বলেন, কিছু সংবাদপত্রে ছবি ছাপা হচ্ছে, এতে দেশের বাস্তব ছবি উঠে আসছে না। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আধুনিক প্রযুক্তি এনেছে, এখন এই প্রযুক্তি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কালো মেঘ হিসেবে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষ এর সাথে মানিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবে এবং অগ্রসর হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ২০০৯ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে চায়নি, ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছে। তারা নিরপরাধ মানুষদের জীবিত পুড়িয়ে নির্বাচন নস্যাৎ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমরা তা হতে দিতে পারি না। তিনি বলেন, প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ প্রতিকূল অবস্থায় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, যা অনেক উন্নত দেশেও অস্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ নির্বাচনকে মেনে নিয়েছে এবং গত এক বছর দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দেশের সব এলাকার উন্নয়ন করা হচ্ছে, এমন সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কোনো কারণ ছাড়াই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের মতো একই পরিস্থিতি তৈরি করে নিরপরাধ মানুষের ওপর চড়াও হয়েছেন। গত এক বছরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের জয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) এবং আন্ত-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) নির্বাচনে ও একই সময়ে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অভূতপূর্ব সমর্থন করেছে। তিনি বলেন, এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনের জন্য প্রতিটি দেশে নিজস্ব ভবন হবে। দেশের অর্থনীতি আগের তুলনায় এখন ভালো, বিশাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং খাদ্য মজুদ আছে, তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সঙ্কট হবে না। সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অত্যন্ত সজাগ রয়েছে। প্রশাসনের প্রতিটি ক্যাডারের সমস্যা সমাধানে আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আন্তরিক। তিনি বলেন, দেশ যদি উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়, তাহলে সবাই এর সুবিধা ভোগ করবে।