চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান জোরদার

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর পুলিশ গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলার পর গ্রেফতারমুখি হয়ে উঠেছে পুলিশ। গতপরশু রাত থেকে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসহ জামায়াতে ইসলামীর ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের সকলকেই বিস্ফোরক মামলায় গতকাল আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া মেহেরপুরে ৭ জন, মুজিবনগরে ১০ জন, গাংনীতে ১৩ জন, দামুড়হুদায় ৪ জন, আলমডাঙ্গায় ৩ জন ও জীবননগরে ৭ জনকে গ্রেফতার করার খবর পাওয়া গেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশসূত্রে জানা গেছে, গতপরশু মঙ্গলবার রাতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রাশীদুল হাসানের নির্দেশে পুলিশের একটি বিশেষ দল জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে জেলা শহরের জোয়ার্দ্দারপাড়ার মৃত সাজ্জাদুর রহমানের ছেলে বিএনপি ওয়ার্ড সভাপতি আলী মাসুদ জোয়ার্দ্দার ওরফে বাবু (৫৬), একই পাড়ার মৃত আবু তালেব জোয়ার্দ্দারের ছেলে আলমগীর হোসেন (৪৫), কেদারগঞ্জ পাড়ার মৃত হামিদুল ইসলামের ছেলে ছাত্রদল নেতা ডালিম (২৫), কুলপালা গ্রামের হাতেম শেখের ছেলে ছাত্রদল কর্মী তুষার (২৩), মাঝের পাড়ার আশরাফ আলীর ছেলে রাসেল জোয়ার্দ্দার (২৪), ইসলামপাড়ার মৃত ওম্বাদ আলীর ছেলে জামায়াতের ইউনিট সভাপতি সবুজ (৩৮), শান্তিপাড়ার রুহুল আমিনের ছেলে সুরুজ আলী (২২), সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার মহি উদ্দিনের ছেলে আলমগীর হোসেন। আটককৃতদের বিস্ফোরক আইনে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।

আলমডাঙ্গা ব্যরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে নাশকতা কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে যুবদল নেতা মনিরুলসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত মঙ্গলবার রাতে আলমডাঙ্গা উপজেলার স্টেশনপাড়ার মহর আলীর ছেলে বিএনপিকর্মী সাজ্জাদুল ওরফে শফি (৪৫), হারদী গ্রামের কালু মণ্ডলের ছেলে জামায়াতকর্মী মনিরুল (২৭) ও ফরিদপুর গ্রামের রেজাউল হকের ছেলে বিএনপিকর্মী হারুনকে (৪২) আটক করে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশের গাড়িতে হামলা, আগুন ও ভাঙচুরসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের একটি দল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে আটক করে। গতকালই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উপজেলার রামনগর গ্রামের পীর মোহাম্মদের ছেলে বিএনপিকর্মী আবুল কাশেম (৩০), জয়রামপুর গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে ছাত্রদলকর্মী লিবু মল্লিক (২৫), রুদ্রনগর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে জামায়াতকর্মী হোসেন আলী (২৭) ও পরানপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে বিএনপিকর্মী জাকির হোসেন (৩৫)। আটক ৪ জনকেই গতকাল দুপুরে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে গাড়িতে বোমা হামলাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর থানা পুলিশ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কায় এদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতভর পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করে। গতকাল বুধবার তাদেরকে অবরোধে যানবাহন ভাঙচুর মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে- বিএনপিকর্মী কাশীপুর মাঠপাড়ার আব্দুল জলিল (৩৫), কুলতলার আবুল হাশেম (৪০), মনোহরপুর মাঠপাড়ার ইঊনুছ আলী (৩২), দৌলৎগঞ্জ বাজারপাড়ার মনির হোসেন (৩৫), জামায়াতে ইসলামী কর্মী আন্দুলবাড়িয়ার ফিরোজ হোসেন (৪৫), খয়েরহুদার শাহাবাজ আলী (৫৫) ও বালিহুদার মিলন হোসেন (৩৫)। থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই লুৎফুল কবীর উল্লেখিতদের গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করেছেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গতকাল বুধবার খুলনা বিভাগে চলছে ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল। সাথে রয়েছে অবরোধ। এসব কর্মসূচিতে নাশকতার আশঙ্কায় মেহেরপুর পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৩০ জনকে আটক করেছে। গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে আটক ৩০ জনের মধ্যে একজন রয়েছেন জামায়াত। বাকিরা বিএনপি নেতাকর্মী বলে জানিয়েছেন মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ। আটককৃতদের মধ্যে সদর থানা পুলিশের অভিযানে আটক রয়েছে ৭ জন, মুজিবনগর থানা পুলিশের অভিযানে আটক রয়েছে ১০ জন ও গাংনী থানা পুলিশের অভিযানে আটক রয়েছে ১৩ জন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ আরো জানান, আটককৃতদের কার্যবিধির ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চলাচল না করার মধ্যদিয়ে মেহেরপুরে হরতাল পালিত হচ্ছে। সকাল থেকে শহরে রিকশা-ভ্যান, অটো-রিকশা, ইজিবাইক, মাইক্রোবাস চলাচল করছে। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা খোলা ছিলো। হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে শহরে কোনো মিটিং-মিছিল ও পিকেটিং হতে দেখা যায়নি। তবে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী এলাকায় হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা জামায়াত ইসলামী। মুজিবনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা জার্জিস হুসাইন বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন। এদিকে যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন ছিলো।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ-হরতাল ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় গত মঙ্গলবার রাতে মুজিবনগর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি-জামায়াতের ১০ কর্মী সমর্থককে আটক করেছে মুজিবনগর থানা পুলিশ। মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, নাশকতার আশঙ্কায় এদের আটক করা হয়েছে। কার্যবিধির ১৫১ ধারায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে।