সারাদেশে ৭২ গাড়িতে আগুন-ভাঙচুর : দগ্ধ ৫

স্টাফ রিপোর্টার: চলছে অবরোধ। সাথে অব্যাহত আছে গাড়িতে আগুন-ভাঙচুর, পেট্রোলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপ। এতে সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে হতাহত মানুষের সংখ্যা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধের ১৫তম দিন ছিলো গতকাল মঙ্গলবার। এদিন রাজধানীর সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শনির আখড়ায় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাজশাহীতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়েছেন আম্বিয়া বেগম নামে এক নারী। সিলেটের গোয়াইনঘাটে বালুবাহী ট্রাকে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন চালক ও তার সহকারী। রাতে চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ ভ্যানে বোমা হামলায় এক কনস্টেবল গুরুতর আহত হন। পিকেটারদের ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন একজন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭২টি গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

অবরোধের পাশাপাশি এ দিন চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী, জয়পুরহাট ও মাদারীপুরে হরতাল পালিত হয়েছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনকে আটক করেছে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ৫টি যানবাহনে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা আরও বাড়তে থাকে। বিকেলে কোথাও কোথাও গাড়ির প্রচণ্ড চাপ দেখা যায়। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে অজানা আতঙ্ক। দোকানপাট খোলা থাকলেও বেচা-কেনা ছিলো কম। দূরপাল্লার রুটে সীমিত বাস চলাচল করে। লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী ছিলো কম। ট্রেনে চলছে টানা সিডিউল বিপর্যয়।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে পুরানো ঢাকার সিদ্দিকবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে হেলাল উদ্দিন নামে এক জুতো ব্যবসায়ী দগ্ধ হয়েছেন। দোয়েল চত্বরে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হন রিকশাচালক আবদুল মান্নান। তাদের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

এছাড়া বাড্ডার লিংকরোড এলাকায় দুটি এবং হাতিরঝিল এলাকার পশ্চিম পাশে সন্ধ্যার পর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গুলিস্তান হকি স্টেডিয়ামের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় ভোরে ৭-৮টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা পুলিশ জানায়, ভোরে প্রগতি সরণির শাহজাদপুরে একটি ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। মিছিল শেষে ওই এলাকায় ৭-৮টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দুপুরে ধানমণ্ডির পপুলার হসপিটালের সামনে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। শনির আখড়ায় ভোরে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কার্যালয়ে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তরা একটি লেগুনাতে অগ্নিসংযোগ করে।

কুড়িল বিশ্বরোডে দুপুরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিবির নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে কুড়িল চৌরাস্তা থেকে মিছিল বের করে বসুন্ধরা গেটের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় শিবির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে সকাল ১১টায় লালবাগ এলাকায় শিবির মিছিল বের করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে দুর্বৃত্তরা পরপর তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করলে তা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর সচিবালয়ের নিরাপত্তা আরও এক ধাপ বাড়ানো হয়েছে।

দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের ইতিহাস বিভাগের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের অবরোধ বিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকালে সদর উপজেলার ৬ নং গান্না ইউনিয়ন ছাত্রলীগের উদ্যোগে গান্না বাজারে মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে গান্না ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ফারুক হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনোয়ার হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাহেব আলী শাহেদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক নাহিদ হোসেন ও ৬ গান্না ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদক মাহফুজুর রহমান। সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতবৃন্দ বলেন, বিএনপি-জামায়াত টানা অবরোধ দিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে তারা জনবিচ্ছিন্ন। হরতাল-অবরোধ ডেকে আওয়ামী লীগকে দমানো যাবে না।