কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন সম্পন্ন

তৈয়ব সভাপতি মাসুদ সম্পাদক নির্বাচিত

 

Darshona-1

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ডল: অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলো। কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাপতি পদে তৈয়ব আলী ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুদুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করা হলেও দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ছিলো থমথমে। টানা অলস সময় কাটিয়েছেন ভোটগ্রহণকারীরা। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সংগঠনগুলোতে মধ্যাহ্নভোজ শেষে আড়াইটার পর প্রায় সব সংগঠনের নেতাকর্মী একযোগে প্রবেশ করেন ভোটকেন্দ্রে। ভোটকেন্দ্র কেরুজ হাইস্কুল চত্বর ভোটার ও প্রার্থীদের অংশগ্রহণে ভরপুর হয়ে পড়ে। বিকেল তিনটার দিকে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে পূর্বঘোষিত মোতাবেক ভোটকেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে হাতে গোনা মাত্র ৪ জন ভোটার ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেনি। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে ও একজন রয়েছেন জেলহাজতে। বাকি দুজন ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিকেল ৩টার দিকে সকলে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করলেও সাড়ে ৫টার পরে শুরু হয় ভোট প্রয়োগ। টানা আড়াই ঘণ্টায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ভোটারদের। সাড়ে ৫টা থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ শুরু হলেও ৭টার দিকে শেষ হয় ভোটগ্রহণ। পর্যায়ক্রমে ভোটগণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রসাশন ভাণ্ডার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ১ হাজার ২০৫ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ২০১ ভোট পোল হয়েছে। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ১৩ জনের ভোট। এ নির্বাচনে তৈয়ব আলী সংগঠনের কর্ণধর তৈয়ব আলী বাইসাইকেল প্রতীকে ৬০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ চশমা প্রতীকে পেয়েছেন ৪১৬, মোস্তাফিজুর রহমান ছাতা প্রতীকে ১০৪ সূর্যসেনা শ্রমজীবী সংগঠনের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৭৪ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুদুর রহমান মাসুদ চাঁদতারা প্রতীকে ৬৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল ইসলাম প্রিন্স হারিকেন প্রতীকে পেয়েছেন ৫১৭ ও আতাউর রহমান মই প্রতীকে পেয়েছেন মাত্র ৮ ভোট। সহসভাপতি পদে রেজাউল করিম কাপপিরিচ প্রতীকে ৪৫০ ভোট ও ফারুক আহম্মেদ তালাচাবি প্রতীকে ৪১২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জয়নাল আবেদীন হাতি প্রতীকে ৩৪৯, জুলফিকার হায়দার কলস প্রতীকে ২৮৭, ইদ্রিস আলী মোমবাতি প্রতীকে ২১৫, এবং শফিকুল আলম টেবিল প্রতীকে ১৫০ ভোট পেয়েছেন। সহসাধারণ সম্পাদক পদে ইসমাইল হোসেন হাঁস প্রতীকে ৩৩৬ ও জয়নাল আবেদীন তলোয়ার প্রতীকে ৩১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খবির উদ্দিন মাছ প্রতীকে ২৮৩, আব্দুল হান্নান মোরগ প্রতীকে ২৪০, আতিয়ার রহমান চেয়ার প্রতীকে ২৩৩, বাবুল আক্তার কলম প্রতীকে ১৯৪, আসাদুল হক ব্যাকা কোদাল প্রতীকে ১১৯ ও নাসির উদ্দিন হাতপাখা প্রতীকে ১১২ ভোট পেয়েছেন। ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডে আয়ুব আলী সন্টু ডাব প্রতীকে ৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সালাহউদ্দিন শাহ সনেট বাল্ব প্রতীকে পেয়েছেন ১০ ভোট। ২ নং ওয়ার্ডে রমজান আলী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। ৩ নং ওয়ার্ডে সানোয়ার হোসেন বালতি প্রতীকে ২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সমির কুমার সরকার ডাব প্রতীকে পেয়েছেন ২০ ভোট। ৪ নং ওয়ার্ডে বাবর আলী ডাব প্রতীকে ৯৬ ও আবুল কাশেম বালতি প্রতীকে ৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিল্লাল হোসেন বেলচা প্রতীকে পেয়েছেন ৭৩ ভোট। ৫ নং ওয়ার্ডে আজিজুল হক ডাব প্রতীকে ৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিল্লাল হোসেন হাতুড়ি প্রতীকে ২৮ ভোট ও মনিরুল ইসলাম বালতি প্রতীকে পেয়েছেন ৮ ভোট। ৬ নং ওয়ার্ডে শ্রী গোবিন্দ কুমার হালদার বালতি প্রতীকে ১১১, মজিবর রহমান ডাব প্রতীকে ৮৫ ও হাফিজুর রহমান আখেরআটি প্রতীকে ৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মঈনউদ্দিন লিটন বাল্ব প্রতীকে ৮১ ও রবিউল ইসলাম হাতুড়ি, শামীম হোসেন বেলচা প্রতীকে পেয়েছেন ১৩ ভোট। ৭ নং ওয়ার্ডে আমিনুল ইসলাম হাতুড়ি প্রতীকে ৯৯, আরিফ ডাব প্রতীকে ৯১ ও আক্রাম আলী কাঁঠাল প্রতীকে ৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মফিজুর রহমান বেলচা প্রতীকে ৬০, মোহাম্মদ আলী বাল্ব প্রতীকে ৪৫, শফিকুল আলম টর্চলাইট প্রতীকে ৩৫ মামুন আহম্মেদ আখেরআটি প্রতীকে পেয়েছেন ১০ ভোট। ৮ নং ওয়ার্ডে বাবুল আক্তার হাতুড়ি প্রতীকে ৮৯ ও আব্দুল কুদ্দুস টর্চলাইট প্রতীকে ৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শরিফুল ইসলাম মোটরগাড়ি প্রতীকে ৫১, শাহআলম ডাব প্রতীকে ৩৪ ও একরাম আলী আখেরআটি প্রতীকে পেয়েছেন ১৭ ভোট। ৯ নং ওয়ার্ডে সাহেব আলী শিকদার ডাব প্রতীকে ৬১ ও এএসএম কবির আখেরআটি প্রতীকে ৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। একমাত্র নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী একরামুল হক বালতি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৭ ভোট। ১০ নং ওয়ার্ডে ইয়ামিন হক আখেরআটি প্রতীকে ৭৫ ও সিরাজুল ইসলাম ডাব প্রতীকে ৬৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মতিয়ার রহমান বালতি প্রতীকে ৬৮ ও আব্দুর রহমান বেলচা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯ ভোট। ১১ নং ওয়ার্ডে আব্দুল আজিজ ডাব প্রতীকে ২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শফিকুল ইসলাম হাতুড়ি প্রতীকে ২৪ ও আব্দুর রাজ্জাক আখেরআটি প্রতীকে ১৩ ভোট পেয়েছেন।

নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, সদস্য সচিব আকুল হোসেন, সদস্য আব্দুল ফাত্তাহ, আকরাম হোসেন শিকদার ও আব্দুস সালাম দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ভোটকেন্দ্রে পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রসাশক মো. দেলোয়ার হোসাইন, কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আজিজুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা এনডিসি মুনিবুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম বেনজির, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান, দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ কামরুজ্জামান, এসআই মহব্বত হোসেন, দর্শনা আইসি ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমানসহ কর্মকর্তারা।

Leave a comment