লাশ নিয়ে মিছিলের চেষ্টা পণ্ড : গ্রামে চাপা উত্তেজনার মাঝে শঙ্কা

চুয়াডাঙ্গা ছয়ঘরিয়ার বিএনপি নেতা সাবেক মেম্বার সিরাজুল ইসলাম খুন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ছয়ঘরিয়ার সাবেক মেম্বার বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মৃতদেহ গতকাল সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্তের পর লাশ গ্রহণ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা লাশ নিয়ে মিছিল বের করতে গেলে পুলিশি বাধায় তা ভেস্তে যায়।

Sirajul Islam
নিহত সিরাজুল ইসলাম সিরাজের ছোট ভাই মহাবুল আলম বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হত্যামামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে আরো ৫/৬ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করেছে। এ মামলায় গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তেমন কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অপরদিকে গ্রামেরই ইউনুস আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান এক প্রতিবাদলিপিতে খুনের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের মৃত কাঙালী মণ্ডলের সেজ ছেলে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য। গতপরশু বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে বড়সলুয়া-ফুলবাড়িয়ার সড়কের মধ্যবর্তী চৌমাথা নামক স্থানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করা হয়। তাকে মোটরসাইকেল থেকে টেনেহেঁচড়ে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে খুন করা হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ গতপরশু বিকেলে বড়সলুয়া বাজার থেকে দুজনকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে ফেরার পথে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা একদল অস্ত্রধারী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। গ্রামেরই আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমানের সাথে পূর্ব বিরোধের জের ধরেই সে তার লোকজন দিয়ে খুন করিয়েছে বলে অভিযোগ করা হলেও অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান এক প্রতিবাদপত্রে বলেছেন, ১৯ জানুয়ারি দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে সিরাজ হত্যারও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে হত্যা রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে গতকাল সোমবার সকালেই সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়া হয়। লাশ দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। মর্গপ্রাঙ্গণে হাজির হন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্মআহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজুসহ অনেকে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ নিকটজনদের নিকট পুলিশ লাশ হস্তান্তর করে। এ সময় লাশ নিয়ে হাসপাতাল চত্বর থেকে মিছিলসহকারে সড়কে নেয়ার চেষ্টা করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পুলিশ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভের মধ্যেই সীমিত থাকে বিএনপির নেতাকর্মীদের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। মৃতদেহ নিজ গ্রামে নেয়া হয়। বিকেলে দাফনকাজ সম্পন্ন করা হয়। গ্রামে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামের অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছে, দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামের বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যে খুন পাল্টা খুনের ঘটনা ঘটে আসছে। নিহত সিরাজের বিরুদ্ধেও এক সময় খুনের অভিযোগ ছিলো। আবার কোন পক্ষের কে কখন খুন হয় কে জানে?