বোমা মেরে মোটরসাইকেলের গতিরোধ : নৃশংসভাবে কুপিয়ে বিএনপি নেতা খুন

চুয়াডাঙ্গার বড়সলুয়া-ফুলবাড়িয়ার মধ্যবর্তী চৌমাথায় ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের দিবালোকে নারকীয় তাণ্ডব

 

Sirajul Islam

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্য ছয়ঘরিয়ার সিরাজুল ইসলামকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে বড়সলুয়া-ভুলটিয়া সড়কের চৌমাথা নামক স্থানে পর পর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাকে টেনেহেঁচড়ে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়।

ঘটনার পর নিহত সিরাজুল ইসলামের বড় ভাই স্কুলশিক্ষক মোশারফ হোসেন ও আজিজুল হক অভিন্ন ভাষায় অভিযোগ তুলে বলেছেন, গ্রামেরই আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান পূর্ব বিরোধের জের ধরে গ্রামেরই মোমিন, নাজমুল, সাইদুল, বাবুলসহ কয়েকজনকে দিয়ে এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। সিরাজুলের সাথে থাকা গ্রামেরই মিলন ও লিটনের সামনেই নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের মৃত কাঙালী মণ্ডলের তৃতীয় ছেলে সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ভূষিমালের ব্যবসা করতেন। তিনি শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন করেন। পরিবারের সদস্যরা এ তথ্য জানিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, গতকাল দুপুরে ব্যবসার কাজে মোটরসাইকেলযোগে বড়সলুয়া বাজারে গিয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। বিকেল ৫টার দিকে তিনি মোটরসাইকেলযোগে গ্রামেরই কায়েম আলীর ছেলে মিলন ও মুকুল হোসেনের ছেলে লিটনকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ফুলবাড়ি ও বড়সলুয়ার মধ্যবর্তী চৌমাথা নামক নির্জন স্থানে মোটরসাইকেলের সামনে পর পর দুটি বোমা নিক্ষেপ করে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে সিরাজুল ইসলামকে টেনেহেঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে হামলাকারীরা সরে পড়ে। পরে তাকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ঘোষণার সাথে সাথে মৃতদেহ তার নিকটজনেরা আলমসাধুযোগে নিজ বাড়িতে নেন। লাশ নিজ বাড়িতে নেয়ার পর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করে। আজ সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হতে পারে।

পরিবারের সদস্যরা আরো বলেছেন, মৃত কাঙালী মণ্ডলের ৭ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মোশারফ হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মেজ ছেলে আজিজুল হক কৃষক। তৃতীয় ছেলে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। তিনি ভূষিমালের ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতি করতেন। চতুর্থ ছেলে রহুল কুদ্দুস গ্রাম্য চিকিৎসক। ৫ম ছেলে বাবুল আক্তার কৃষক। ৬ষ্ঠ ছেলে মাহবুল আলম ব্যবসায়ী। ছোট ছেলে জিল্লুর রহমান ইবির ছাত্র। সিরাজুল ইসলামের রয়েছে শিশু দু ছেলে। বড় ছেলে নির্ণয় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে নীরবের বয়স ২ বছর। স্ত্রী হিরা খাতুন তার স্বামী খুনের খবরে বাকশক্তি হারিয়ে শোকে পাথর। সন্তান খুনের খবরে মা সফুরা খাতুনও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একমাত্র বোন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ছয়ঘরিয়া গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এ খুন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, সিরাজুল ইসলামের সাথে গ্রামের হাবিবুরের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। হাবিবুরের এক ভাই পূর্বে সরোজগঞ্জে খুন হলে ওই সিরাজুলের দিকেই অভিযোগের আঙুল ওঠে।

খুনের পর সিরাজুল ইসলামের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে অভিযোগ তুলে মোশারফ হোসেন বলেন, হাবিবুরই তার লোকজন দিয়ে এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। খুনে অংশ নিয়েছে গ্রামেরই মোমিন, নাজমুল, সাইদুল ও বাবলুসহ তাদের সহযোগী টিটু। এদেরকে আসামি করেই আজ মামলা দায়ের করা হতে পারে। অপরদিকে ঘটনার দীর্ঘ সময় পর খবর পেয়ে পুলিশ নিহত সিরাজুলের বাড়িতে পৌঁছায়।