সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি? চমকে ওঠার মতোই তথ্য। শুধু কি তাই? সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বছরের শুরুতে নানা খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায় করা হচ্ছে হাজারের অধিক টাকা। এসব তো আর গোপনে নয়, প্রকাশ্যেই হচ্ছে। অনেক অভিভাবকই সন্তানের বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি জোগাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এসব দেখভালে তদারক কর্তাদের তৎপরতা দুরস্ত, জবাবদিহিতার ন্যূনতম ব্যবস্থা আছে কি না তা নিয়েই এখন প্রশ্ন। সকল শিশুকে শিক্ষার আওতায় নেয়ার বিশেষ উদ্যোগ তরান্বিত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি আদায়ের রেওয়াজ বন্ধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদানের পাশাপাশি সাক্ষরতা বাড়ানোর নানামুখি উদ্যোগ যখন দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে, তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি আদায়ের মতো অনিয়ম প্রশ্রয় পাচ্ছে কীভাবে? সঙ্গত কারণেই যেমন এ প্রশ্ন, তেমনই সেশনচার্জের নামে অতো টাকা আদায়ের হিম্মতই বা বিদ্যালয় প্রধানের হলো কার সাহসে? বলার অবকাশ রাখে না, বনভোজন, মেগাজিনসহ নানা খাত দেখিয়ে যে অর্থ আদায় করা হয় তা খরচও হয়, জমা হয় ভাউচারও। শিক্ষার্থীরা তার কতোটুকু বাস্তবায়ন দেখতে পায়? বছরের শুরুতে সেশন ফি এক-দেড় হাজার, এ আর অতো বেশি কী! এ ধরনের মন্তব্য কেউ কেউ করতেই পারেন। যে অভিভাবকের দু কিংবা তার অধিক সন্তান মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ওই অভিভাবকের কী দশা তা দায়িত্বশীলদের উপলব্ধিতে নেয়া উচিত নয় কি? তার ওপর আছে বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক-জুতো। প্রাথমিকে ভর্তি ফি? সব প্রাথমিকে ভর্তি ফি না নেয়া হলেও কিছু বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি আদায় যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাড়পত্র নেয়ার ক্ষেত্রেও মিষ্টি খাওয়ার অজুহাতে কিছু বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় টিসি ফি। এ বিষয়ে কোনো কোনো বিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়, খরচ আছে না? সব খরচ তো আর সরকার দেয় না। যুক্তি যে খোঁড়া তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। আপ্যায়নসহ কিছু তহবিল প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই দেয়া হয়। তাতে না পোষালে প্রয়োজনে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা যেতেই পারে। কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কী বরাদ্দ বৃদ্ধির একটি আবেদনও করেছেন?
সরকারের বিশেষ সুনজরের কারণে কমছে ঝরে পড়ার হার, যা সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ অতি জনবহুল একটি দেশ এবং জনসংখ্যার বেশির ভাগই বয়সে শিশু-কিশোর ও তরুণ। শিক্ষাখাতে নেয়া সরকারি উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি নজরদারি ব্যবস্থাটি কার্যকর করা দরকার। অকারণে ভর্তি ফি, অস্বাভাবিক সেশনচার্জ আদায়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি আদায়কৃত অর্থের স্বচ্ছ হিসাব প্রকাশেরও বাধ্যবাধকতা দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলে তাতে খাতওয়ারি আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করা যেতে পারে।