জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সব পক্ষ নিয়ে সংলাপই সমাধান

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে চলমান সঙ্কট রাতারাতি নিরসনে কোনো ম্যাজিক নেই। তবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপ করে সমস্যা সমাধানে উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা যেতে পারে। জাতীয় সংলাপে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, বরং সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের পথ খোঁজা উচিত। এতে অনেক কিছু বেরিয়ে আসতে পারে। রাজনৈতিক সমস্যার অরাজনৈতিক সমাধান নতুন সমস্যার জন্ম দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান কার্নেজ অ্যানডোম্যান্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর দক্ষিণ এশিয়া কর্মসূচির পরিচালক ফ্রেডরিক গ্রেয়ার রোববার ঢাকায় সাংবাদিকের সাথে আলাপকালে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে তিনি ঢাকায় এসেছেন। তিনি রোববার গুলশানে অবস্থিত লেক ক্যাসেল হোটেলে এক বক্তৃতায় অংশ নেন। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিস (বিপস) আয়োজিত এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইন্সটিটিউটের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান। দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থার অবস্থা শীর্ষক এই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশ্নোত্তরে অংশগ্রহণ করেন।

বক্তৃতা অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফ্রেডরিক গ্রেয়ার বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে জানতে আমি এই সফরে এসেছি। এখানে আমি প্রায় এক সপ্তাহ অবস্থান করব। পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে সবিস্তারে জানার পর আমি মন্তব্য করতে পারব। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সঙ্কট রাতারাতি সমাধানে কোনো ম্যাজিক নেই।

তিনি আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংলাপ করে উপায় খুঁজে দেখা যেতে পারে। এখানে শুধু রাজনীতিবিদদের নিয়ে আলাপ করলে হবে না। জাতীয় সংলাপে মধ্যস্থতা করতে পারে জাতিসংঘ। নির্বাচন দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন মনে হয় না। নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সমস্যার ধরন বদল হতে পারে; কিন্তু সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হয়ে যাবে না। ফলে ভবিষ্যতের জন্য করণীয় নির্ধারণে আলোচনা করে বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালিত হবে তার একটা রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

মার্কিন এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গণতন্ত্রকে শুধু নির্বাচনের মধ্যে সীমিত করে রাখা যায় না। গণতান্ত্রিক সমাজে জবাবদিহিতা ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। তবে গণতন্ত্রে কোনো ক্ষেত্রেই সহিংসতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, সুশাসন হলো ভালো ব্যবস্থাপনা। উগ্রবাদ সুশাসনের অভাবে জন্ম নেয় এমন সরল ধারণা দেয়া যায় না। গণতন্ত্র ছাড়াও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে। বেসরকারি কোম্পানিতে কোনো গণতন্ত্র থাকে না তাই বলে সেখানে ভালো ব্যবস্থাপনা নেই এমন বলা যায় না। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্র অপরিহার্য নয়। গণতন্ত্র হলো একটা পছন্দ কিংবা অপছন্দের ব্যাপার। দক্ষিণ এশিয়া সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র ও সুশাসনকে পছন্দ করে থাকে। বিপস সভাপতি মুনিরুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক স্পেস সঙ্কুচিত হলে সেখানে উগ্রবাদ প্রবেশ করার সুযোগ পায়। সঙ্কট ঘনীভূত হলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় থাকে না। তাই এখনই রাজনৈতিক স্পেস সৃষ্টি করে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এখন সংঘাতপূর্ব কিংবা সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হলে তা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন সমস্যার সমাধান দিতে পারে।