সভাপতি প্রার্থী তৈয়বকে ঠেকাতে ৩ সভাপতি প্রার্থীর জোট : ঐক্য নিয়ে মতানৈক্য
দর্শনা অফিস: আজ বাদে কাল অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। জেলার একমাত্র আলোচনার বিষয় এখন এ নির্বাচন। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন মানেই চমকের ওপর চমক। প্রার্থী ও ভোটারের মধ্যে মুহূর্তে মুহূর্তে পাল্টায় মনোভাব। কখন কে কার পক্ষের তা বুঝতে অনেকটাই হিমসিম খেতে হয় প্রার্থীদের। চলে দল বদলের হিড়িক। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর চমকের মধ্যে প্রধান আলোচ্য বিষয় ৩ সভাপতি প্রার্থীর ঐক্য। গত নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত সভাপতি প্রার্থী তৈয়ব আলীকে ঠেকাতেই নাকি ওই ঐক্য। এরই মধ্যে ঐক্য নিয়ে দেখা দিয়েছে মতানৈক্য। কে হচ্ছেন একক প্রার্থী তা এখনো খোলসা হয়নি। তবে যেকোনো সময় একক প্রার্থী ঘোষণার কথা শোনা গেছে। আর সে সময় হতে পারে ভোট গ্রহণকালীন। শেষ পর্যন্ত কী একক প্রার্থী ঘোষণা হবে নাকি স্বার্থের জন্য কেউ কাউকে ছাড় দিবে না? এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তিন নেতার সমর্থক ও শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে। আগামীকাল ২০ জানুয়ারি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। নির্বাচনের একদিন বাকি থাকলেও এখনো তিন নেতার মধ্যে সমন্বয় হয়নি কে হচ্ছেন সভাপতি প্রার্থী। গত ৩ জানুয়ারি হইহুল্লোর মধ্যে দিয়ে ভেস্তে গেছে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক সাধারণসভা। ওই দিনই দু ভাগেই বিভক্তি হয়ে পড়ে শ্রমিক নেতারা। পাল্টাপাল্টি স্লোগানে বের করা হয় বিক্ষোভ মিছিল। পরদিন ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি ২ বারের সভাপতি প্রার্থী ফারুক আহম্মেদ সংগঠন গুঁটিয়ে সভাপতি প্রার্থী তৈয়ব আলীর হাতে হাত দিয়ে তাকে সমর্থন করেন। এতে আরো শক্তিশালী হয় তৈয়ব আলীর হাত। তৈয়ব সংগঠনের জনবল বেড়ে যাওয়াই ঘাবড়ে যায় অনেকেই। কয়েকদিনের মাথায় নতুন চমকের সৃষ্টি হয়। সূর্যসেনা শ্রমজীবী সংগঠনের চেয়ারম্যান, সাবেক সভাপতি এ নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, ২ বার নির্বাচিত সাবেক সহসভাপতি বর্তমানে সভাপতি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও ৬ বারের নির্বাচিত সভাপতি চাকরিচ্যুত আজিজুল হকের ছেলে এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে নতুন মুখ ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ দাঁড়িয়েছেন এক কাতারে। তিন সভাপতি প্রার্থীর জোট বেশ আলোচনার ঝড় তোলে। তিন সংগঠনের নেতা ও সমর্থকরা একসাথে মিছিল-মিটিং ও নির্বাচনী প্রচারণায় গরম করে তুলেছেন নির্বাচনী মাঠ। তিন নেতার ঐক্য শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে তা এখনো অনিশ্চিত। ঐক্য টিকে থাকলে ভোটযুদ্ধে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম শুধু কেরুজ আঙিনায় নয়, এ নির্বাচনের বাতাস গোটা জেলায় বইছে। দিনভর প্রার্থীদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, ভোটারের দ্বারে দ্বারে দোয়া, সমর্থন ও ভোট প্রার্থনার পর সন্ধ্যা থেকে স্ব স্ব সংগঠন কার্যালয়ে শুরু হয় সভা-সমাবেশ। মিছিলের মধ্যদিয়ে শেষ করা হয় নির্বাচনী প্রচারভিযান। মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ৩ জানুয়ারি থেকে ৩ সভাপতি প্রার্থী হাফিজ, আমি নিজে ও সবুজ এক কাঁতারে দাড়িয়ে শুরু করেছি প্রচারণা। নিজেদের মধ্যে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে সমন্বয় করে নেবো। তবে কবে নাগাদ সভাপতি প্রার্থী সমন্বয় করা হবে তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, সকলেরই ছাড় দেয়ার মানসিকতা রয়েছে।
এ ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিনে এমনকি ভোটগ্রহণের প্রায় শেষ মুহূর্তে একক প্রার্থী ঘোষণা হতে পারে। এখন দেখার অপেক্ষামাত্র ৩ নেতার মধ্যে কে হন সভাপতি প্রার্থী। সভাপতি পদে দ্বিধা-বিভক্তি থাকলেও সাধারণ সম্পাদক বা অন্যান্য পদের ব্যাপারে নেই কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব। এবারের নির্বাচনে ইউনিয়নের ২৫টি পদের মধ্যে ২নং ওয়ার্ড সদস্য পদে রমজান আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- তৈয়ব আলী (বাইসাইকেল), হাফিজুল ইসলাম (আনারস) মোস্তাফিজুর রহমান (ছাতা) ও ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ (চশমা) প্রতীকে। সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন ৩ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স (হারিকেন), সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ (চাঁদতারা) ও আতাউর রহমান (মই) প্রতীকে। সহসভাপতি পদে মাঠে রয়েছেন, ইদ্রিস আলী (মোমবাতি), জয়নাল আবেদীন (হাতি), জুলফিকার হায়দার (কলস), ফারুক আহম্মেদ (তালাচাবি), রেজাউল করিম (কাপপিরিচ) ও শফিকুল আলম (টেবিল)। সহসাধারণ সম্পাদক পদে ভোটযুদ্ধে লড়ছেন, আতিয়ার রহমান (চেয়ার), আসাদুল হক ব্যাকা (বেলচা), আ. রব বাবু (দোয়াত-কলম), আব্দুল হান্নান (মোরগ), ইসমাইল হোসেন (হাস), খবির উদ্দিন (মাছ), জয়নাল আবেদীন (তলোয়ার), নাসির উদ্দিন (হাতপাখা) ও বাবুল আক্তার (কলম)। ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে আয়ুব আলী সন্টু (ডাব) ও সালাহ উদ্দিন শাহ (বাল্ব)। ২নং ওয়ার্ডে রমজান আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। ৩নং ওয়ার্ডে সানোয়ার হোসেন (বালতি) ও সমির কুমার সরকার (ডাব)। ৪নং ওয়ার্ডে আবুল কাশেম (বালতি), বাবর আলী (ডাব) ও বিল্লাল হোসেন (বেলচা) প্রতীক। ৫নং ওয়ার্ডে আজিজুল হক (ডাব), বিল্লাল হোসেন (হাতুড়ি) মনিরুল ইসলাম (বালতি)। ৬নং ওয়ার্ডে শ্রী গোবিন্দ কুমার হালদার (বালতি), মঈন উদ্দিন লিটন (বাল্ব), মজিবর রহমান (ডাব), রবিউল ইসলাম (হাতুড়ি), শামীম হোসেন (বেলচা) ও হাফিজুর রহমান (আখের আঁটি)। ৭নং ওয়ার্ডে আক্রাম আলী (কাঁঠাল), আমিনুল ইসলাম (হাতুড়ি), আরিফ (ডাব), মফিজুর রহমান (বেলচা), মামুন আহম্মেদ (আখের আঁটি), মোহাম্মদ আলী (বাল্ব) ও শফিকুল আলম (টর্চলাইট)। ৮নং ওয়ার্ডে আব্দুল কুদ্দুস (টর্চলাইট), একরাম আলী (আখের আঁটি), বাবুল আক্তার (হাতুড়ি), শরিফুল ইসলাম (মোটরগাড়ি ও শাহআলম (ডাব)। ৯নং ওয়ার্ডে একরামুল হক (বালতি), এএসএম কবির (আখের আঁটি) ও সাহেব আলী শিকদার (ডাব)। ১০নং ওয়ার্ডে আব্দুর রহমান (বেলচা), ইয়ামিন হক (আখের আঁটি), মতিয়ার রহমান (বালতি) ও সিরাজুল ইসলাম (ডাব) এবং ১১নং ওয়ার্ডে আব্দুল আজিজ (ডাব), আব্দুর রাজ্জাক (আখের আঁটি) ও শফিকুল ইসলাম (হাতুড়ি)।
কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রশাসন ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যবিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের ১ হাজার ২শ জন ভোটার গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন মানেই প্রচুর অর্থ ব্যয়। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জিততে মরিয়া হয়ে ওঠেন প্রার্থীরা। প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেন একেকজন প্রার্থী। আসলে কেন, কী কারণে এতো অর্থ ব্যয় আর কোথা থেকে অর্থের জোগান দেয়া হয়ে থাকে তা সকলের কাছেই পরিষ্কার। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ মানেই সোনার হরিণ। যে কারণে শুধু জোগানকৃত টাকায় ব্যয় হয়ে থাকে না বরং নিজেদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয় প্রার্থীদের। যে কারণে কেরুজ নির্বাচন মানেই আলোচনা-সমলোচনার ঝড়। নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন, সদস্য সচিব আকুল হোসেন, সদস্য আব্দুল ফাত্তাহ, আকরাম হোসেন শিকদার ও আব্দুস সালাম রয়েছেন। মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ। কেরুজ হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে গোপন ব্যালোটের মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে।