সারাদেশে বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসন তৎপর। সমাজের সচেতন সাধারণ মানুষও বাল্যবিয়ে রোধে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সোচ্চার। এরপরও বাল্যবিয়ের আয়োজন যেন থামছে না। কেন? কোথাও না কোথাও কিছু ত্রুটি তো রয়েছেই।
অবশ্যই অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব বিদ্যমান। সমাজের সাধারণ মানুষগুলোকে সচেতন করতে শুধু আইন প্রয়োগ নয়, প্রশাসানিক তৎপরতার সাথে সাথে তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, কাজি ও ইমামসহ শিক্ষকদেরও বাল্যবিয়ে রোধে কর্তব্যপরায়ণ করে তোলার বিশেষ উদ্যোগ দরকার। জন্মনিবন্ধন প্রদানেও অনিয়ম রোধে শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
সম্প্রতি বিয়ের আসরে প্রশাসনিক কর্মকর্তার উপস্থিতি এবং বিয়ে ভেস্তে দেয়ার পাশাপাশি কাজি ও ঘটকসহ বর-কনের পিতা-মাতাকে দণ্ডিত করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিয়ের আয়োজনের পূর্বেই প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার। কারণ- সমাজে এমন কিছু পরিবার রয়েছে যারা অনেক সময় না বুঝেই ভালোপাত্রের সন্ধান পেয়ে ধার-কর্য করে মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়সেই বিয়ের আসনে বসাচ্ছেন। কনের বয়স ১৮ বছরের কম হলে কাজি বিয়ে পড়াবেন না বলে জানালে, বিশেষভাবে জন্মসনদ সংগ্রহের জন্য ছুটছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় সরকারের কাছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেয়েও যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ফটোকপির দোকানের সহযোগিতা নিয়ে জন্মসনদ জালও করা হচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ বাল্যবিয়ের আড়ালে সুক্ষ্মভাবে হলেও লুকিয়ে রয়েছে রাস্তা-ঘাটে উত্ত্যক্তকারীদের উৎপাত। ফুঁসলিয়ে প্রেমের প্রস্তাবে বিপথগামীর শঙ্কাই নয়, মেয়ের জন্য তার অভিভাবকদেরও অনেক সময় রাস্তা-ঘাটে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়।
বাল্যবিয়ে সমাজের অভিশাপ। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের আসনে সন্তানকে বসানো মানে নিজের হাতে নিজের সন্তানকে মৃত্যু যন্ত্রণার মধ্যে ফেলে দেয়া। ভবিষ্যতকেও ধ্বংস করে দেয়া। চরম এ সত্য ক’জন অভিভাবক জানেন? সচেতন করতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
কাজিদের মধ্যে যারা অর্থের লোভে পড়ে বাল্যবিয়ে পড়াতে উঠে পড়ে লাগেন তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি জন্মসনদ প্রদানে অনিয়ম রুখতে বিশেষ উদ্যোগ দরকার। সড়কে উত্ত্যক্তকারীদের রুখতে শুধু অভিযোগের জন্য অপেক্ষার বদলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও বিশেষ দৃষ্টি প্রয়োজন। বিশেষ স্থানগুলোতে স্কুল-কলেজ চলার সময় পুলিশি টহল দরকার।