স্টাফ রিপোর্টার: প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা খুলে দিলেও ১১ ঘণ্টা পর পুলিশ আবার তালা দিয়েছে। তবে তিনি এখনও নিজ কার্যালয়েই অবস্থান করছেন। ফটকের বাইরে পুলিশি অবস্থান আগের মতোই রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপি ডাকা লাগাতার অবরোধ অব্যাহত থাকবে।
গতকাল বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা খুলে দেয় পুলিশ। গত ৫ জানুয়ারি দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ ওই কার্যালয়ের ছোট (পকেট) ও মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়। ছোট গেটের তালা ওইদিনই সন্ধ্যায় খুলে দেয়া হলেও মূল ফটকের তালা এতোদিন লাগানো ছিলো। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে গুলশাল থানা পুলিশের একটি দল প্রধান ফটকে আবারো তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে আবারো তালা দেয়া হয়েছে। সকালে তালা খুলে দেয়ার পর দলীয় তেমন কোনো নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে যাননি। রাতে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার পর পুলিশের নিরাপত্তা আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়। অপরদিকে বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী গতকাল রাতে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করতে গেলেও পুলিশ গাড়ি নিয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ায় ফিরে গেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে যান তিনি। কিন্তু খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবেশের সময় সেখানে রাখা পুলিশের জলকামানের কারণে যেতে পারছিলো না তার গাড়ি। এ সময় বি. চৌধুরী কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বলেন, আমি দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং একজন সিনিয়র সিটিজেন। গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে পারছি না। আপনাদের এক মিনিট সময় দিচ্ছি, জলকামান সরিয়ে নিন, আমি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করবো। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাকে হেঁটে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বি. চৌধুরী আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, বেইজ্জতির একটা সীমা আছে। এটা কোন ধরনের অসভ্যতা। এসব কথা বলে তিনি ফিরে যান। এর আগে ৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলেও পুলিশ তাকে অনুমতি দেয়নি।
এদিকে গতকাল এক বিবৃতিতে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সময় নষ্ট না করে দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক বি. চৌধুরী। বিবৃতিতে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি দাবি করেন।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকজনের সাক্ষাত: খালেদা জিয়ার সাথে গতকাল বিকালে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিএনপি পন্থি কিছু লোকজন সাক্ষাত করেছেন। প্রথমে দেখা করেন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) উপদেষ্টা চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের নেতৃত্বে সংগঠনটির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সাক্ষাত শেষে গাজী মাজহারুল উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ। গলায় ব্যথার কারণে আমাদের সাথে তিনি অল্প কথা বলছেন। দ্রুত সুস্থতার জন্য উনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। প্রতিনিধি দলে থাকা জাসাসের অন্য দুজন হলেন- চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন ও অভিনেতা আশরাফউজ্জামান উজ্জ্বল। জাসাস সহসভাপতি বাবুল আহমেদ, অভিনেতা হেলাল খান ও জাকির হোসেন রোকনও প্রতিনিধি দলে ছিলেন। তবে পুলিশ তাদেরকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।
এছাড়া মাইলস ব্যান্ডের প্রধান শাফিন আহমেদও গতকাল বিকাল সাড়ে পাঁচটায় খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে এসেছি।
মহিলা দলের মাছ-মুরগি-সবজি ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ: এর আগে পুলিশ তালা খুলে দেয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খালেদা জিয়া ও তার সাথে অবস্থান করা অন্যদের জন্য মাছ, মুরগি, সবজি ও ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হন মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী। তবে পুলিশ অনুমতি না দেয়ায় তারা সেগুলো ভেতরে পৌঁছাতে পারেনি।
মহিলা দলের সভানেত্রী নুরে আরা সাফার নেতৃত্বে সংগঠনের ১২-১৩ জনের একটি দল রিকশাভ্যানে করে এসব খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের অদূরে এসে পৌঁছান। খাদ্যদ্রব্য নেয়ার অনুমতি না দিলেও নুরে আরা সাফা ও ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী সুলতানা আহমেদকে খালি হাতে কার্যালয়ের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ।
অবরোধ চলবে: বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে দেয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে তিনি এ কথা জানান। সালাহউদ্দিন আহমেদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের সকল নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।