তখন সবে সন্ধ্যা। দোকানি বেচা-বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত। একদল অস্ত্রধারী হুড়মুড় করে দোকানের মধ্যে ঢুকে অস্ত্রের মুখে শুরু করলো তাণ্ডব। টাকা রাখার বাক্স থেকে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দোকানি তাপসকে অপহরণ করে নিয়ে গেলো। দোকানের আশপাশে থাকা লোকজন তখন কী করছিলেন? অপহরকচক্রের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে লুটেরা অপহরকচক্র কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনাটি ঘটে গতপরশু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর বাজারে। অপহরণের পর রাতেই অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়েছে নাকি পুলিশি অভিযানের মুখে তাকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে? স্পষ্ট তথ্য নেই।
জনসমাগম বাজারে বোমা ফাটিয়ে একজন মুদিদোকানিকে অস্ত্রের মুখে অপহরণের পরও কি বলতে হবে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক? একই এলাকায় সম্প্রতি এক প্রবাস ফেরত ব্যক্তিকে তার বাড়ির উঠোনে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয় একদল অস্ত্রধারী। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ভরসন্ধ্যায় মুদিদোকানে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে অপহরণের ঘটনা এলাকাবাসীকে শুধু আতঙ্কগ্রস্তই করেনি, ঘুম কেড়ে নিয়েছে। মধ্যরাতে অপহৃতকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে সকালে খবর পাওয়া গেলেও জনমনে স্বস্তি যে ফেরেনি তা সহজেই অনুমান করা যায়। বিষয়টি কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। অবশ্যই পুলিশই জনগণের ভরসা। পুলিশ যদি পেশাদারত্ব হারায়, হারায় দায়িত্বশীলতা তাহলে সাধারণ মানুষের দাঁড়ানোর যে জায়গা থাকে না! পুলিশের অপ্রতুলতাও অস্বীকার করা যায় না। সকল অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠতে হবে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যেমন পুলিশকে সক্ষম করে তুলতে হবে, তেমনই অক্ষমতা দূর করতে হলে জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা দরকার। প্রয়োজনে জবাবদিহিতার পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।
মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা এক সময় সন্ত্রাসকবলিত হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। রক্তপাত নৃশংসতা ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। সেই শ্বাসরুদ্ধকর গুমটাবস্থা কাটলেও এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা ছিঁচকে অস্ত্রধারী গ্যাং কখনো চাঁদাবাজি, কখনো অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, কখনো ছিনতাই-রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এদের ক’জনই আর ধরা পড়ছে? একের পর এক ঘটনা গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষকে শুধু শঙ্কিতই করছে না, তাদেরকে জানমালের চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। প্রতিকারে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে না পারলে পরিস্থিতি যে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। কালবিলম্ব পরিস্থিতি বেসামাল করে তুলবে।