কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন ২০ জানুয়ারি

শুরু হয়েছে দল বদলের পালা : দর্শনা মিছিলের শহরে পরিণত

 

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ সরগরম এখন শুধু কেরুজ আঙিনায় নয়, এ নির্বাচনের বাতাস ছড়িয়ে পড়েছে গোটা জেলায়। সাড়ে ১২শ শ্রমিক-কর্মচারী ভোটার হলেও ভোটের কথা যেন হাজার হাজার মানুষের মুখে মুখে। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা শহর। চায়ের দোকান, হোটেল, রেঁস্তোরা আর রাস্তার মোড়ে মোড়েই নয় এ নির্বাচনী আলোচনা যেন সর্বমহলেই চলছে। আগামী ২০ জানুয়ারি কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। সে হিসেব মতো নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। কিন্তু প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনকে সামনে রেখেই নয়, তাদের প্রচারভিযান শুরু হয় নির্বাচনের পর থেকে। প্রার্থীরা টানা দু বছরই ছুটে থাকেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণায় মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যায় প্রার্থীদের। সকলেই ছুটছেন জয়ের লক্ষ্যে। ছবি সংবলিত চমকপ্রদ ক্যালেন্ডার, পোস্টার ও ডিজিটাল ব্যানারের চাদরে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে কেরুজ এলাকা। এরই মধ্যে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে দল বদলের পালা। ইতোমধ্যে গত দুবারের সভাপতি প্রার্থী সাবেক সহসভাপতি ফারুক আহম্মেদ স্ব-দলবলে তৈয়ব সংগঠনকে সমর্থন করেছেন। ফারুক আহম্মেদ আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দু বছর মাঠ চষলেও অবশেষে সভাপতি প্রার্থী তৈয়ব আলীর হাতে হাত দিয়ে তার সংগঠনে যোগদান করেছেন।

১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এশিয়া মহাদেশের ২য় সর্ববৃহত্তম ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ঐতিহ্যবাহী দর্শনা কেরুজ চিনিকল। প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনে আতিয়ার রহমান সভাপতি ও আমজাদ হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর থেকে নির্বাচনের সঠিক হিসেব কেউ দিতে না পরলেও স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে হিসেব মতে আগামী নির্বাচন হবে ইউনিয়নের ২২তম নির্বাচন। এদিকে নির্বাচনের দিন ২০ জানুয়ারি ঘোষণা হওয়ায় সাম্ভাব্য প্রার্থী, সমর্থন ও ভোটারদের দৌঁড়ঝাপ যেন বেড়েছে। পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মোটরসাইকেল শোডাউনে সরগরম অবস্থায় পরিণত হয়েছে কেরুজ আঙিনা। কেরুজ চিনিকলের হিসাব, প্রশাসন ভান্ডার, স্বাস্থ্য বিভাগ, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ২শ। আগামী ১০ জানুয়ারি চূড়ান্ত খোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। সেক্ষেত্রে ভোটার সংখ্যা বাড়াতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মোশারফ হোসেন বলেছেন, আজ ৮ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করা হবে। আগামী ১০ জানুয়ারি প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বিক্রি, জমা, বাচাই ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, তৈয়ব সংগঠনের কর্ণধর তৈয়ব আলী, সূর্যসেনা শ্রমজীবী সংগঠনের সভাপতি, ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, এরই মধ্যে ফারুক আহম্মেদ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে তৈয়ব সংগঠনকে সমর্থন করেছেন। কয়েকবার নির্বাচিত সভাপতি আজিজুল হক অবসর গ্রহণ করায় এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। তবে তার ছেলে ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ সংগঠনের হাল ধরেছেন। ফলে ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ভোটযুদ্ধে মাঠে রয়েছেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন প্রায় শতাধিক প্রার্থী। এখন দেখার অপেক্ষামাত্র শেষ পর্যন্ত কতোজন প্রার্থী টিকে থাকেন মাঠে।

Leave a comment