হারানো মেয়েকে ৫ বছর পর ফিরে পেলেও থাকা হলো না মা রেশমার
কামরুজ্জামান বেল্টু: পাঁচ বছর আগে হারানো দু সন্তানের মধ্যে এক সন্তান ফিরে পাওয়ার দু মাসের মাথায় চলে গেলেন মা রেশমা। দু সন্তান হারানোর পরই রেশমা খাতুন (২৮) নিজের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। মেয়েকে ফিরে পাওয়ার পরও স্বাভাবিক হননি তিনি। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে উষ্ণতার আশায় আগুনের পাশে বসে দগ্ধ হয়ে মারা গেলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসাপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রেশমা।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে টানা ৮ দিন তীব্র যন্ত্রণায় কাতরালেও অর্থাভাবে তাকে তার নিকটজনেরা নিতে পারেননি ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে। রেশমার স্বামী শাহীন ভ্যানচালক। তিনি চুয়াডাঙ্গা ভিমরুল্লার ইমরান ফিলিং স্টেশনের অদূরে রাস্তার পাশের সরকারি জমিতে গড়ে তোলা কুঁড়েঘরে বসবাস করেন। গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওই বাড়ির চুলার পাশে বসে আগুন তাপাতে গিয়ে রেশমার শাড়িতে আগুন ধরে যায়। আগুনে শরীরের ৬০ ভাগ পুড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক অগ্নিদগ্ধ রেশমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার পরামর্শ দেন। ভ্যানচালক শাহিন দরিদ্র। অগ্নিদগ্ধ স্ত্রীকে সুস্থ করতে চিকিৎসার খরচ পাবেন কোথায়? খানেকটা বিনা চিকিৎসায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বিছানায় পড়ে কাতরাতে থাকেন রেশমা। দৃশ্য দেখে হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. নূরুদ্দীন রুমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু অর্থ দেন। ওই টাকা দিয়েই চলছিলো ওষুধ পথ্য কেনা। তাতে রেশমাকে সুস্থ করে তোলা যায়নি। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে মারা যান তিনি। মৃতদেহ ভিমরুল্লায় নেয়া হয়। সেখানেই দাফনের প্রস্তুতি চলে।
জানা গেছে, শাহীন তার তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ভিমরুল্লার রাস্তার পাশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। ২০১০ সালের ১২ আগস্ট দু শিশু ছেলে নিশান ও মেয়ে বৃষ্টি হারিয়ে যায়। পিতা বকবে ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় দু ভাই বোন। দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর গত ২ নভেম্বর মেয়ে বৃষ্টিকে ফিরে পান রেশমা। ছেলে নিশান এখনও নিখোঁজ। ছেলে মেয়ে হারানোর পর থেকেই মা রেশমা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। নিজের প্রতি হয়ে পড়েন উদাসীন। হারানো মেয়ে ফিরে পেলেও নিজেকে মেয়ের পাশে রাখতে পারলেন না রেশমা। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে আগুনের পাশে বসে ৮ দিনের তীব্র যন্ত্রণা সহ্যের পর চলে গেলেন পরপারে।