স্টাফ রিপোর্টার: নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট প্রতিরোধ ও মূল্য অস্থিরতা ঠেকাতে নতুন কৌশলে কাজ করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ২৬টি নিত্যপণ্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত পণ্যের উৎপাদক, আমদানিকারক, পাইকার ও ডিলারদেরও নখদর্পণে নেয়া হবে। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় থাকবে বৈশ্বিক বাজারে এসব পণ্যের সম্ভাব্য সরবরাহ মাত্রা ও মূল্যস্তর। দেশে আমদানিকৃত পণ্যের ট্যারিফ মূল্যও বিবেচনায় নেয়া হবে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ মজুদ ও সম্ভাব্য উৎপাদন পরিস্থিতির তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এভাবে আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি, বৈশ্বিক মূল্য, ট্যারিফ মূল্য, উৎপাদন ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে পণ্যভিত্তিক সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করার পরিকল্পনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের নখদর্পণে রাখা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এসব বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরবে সরকার। এতে ব্যবসায়ীদের হুশিয়ারি দেয়া হবে-এর বেশি দাম নেয়া যাবে না।
সূত্র জানায়, নতুন কৌশলে বাজার অস্থিরতা ঠেকানোর এ উদ্যোগ কার্যকরে ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক সেল খোলা হয়েছে। এর নাম দেয়া হয়েছে দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম মনিটরিংয়ে এসে যেকোনো মূল্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেন। এ জন্য প্রয়োজনে তিনি বাজার পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহধর্মী একটি পৃথক সেল খোলার ব্যাপারেও অভিমত দেন। তারই আলোকে দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেল চালু করা হয়েছে। নবগঠিত এ সেল যেকোনো মুহূর্তের অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় আগাম তথ্য সরবরাহ করবে। একই সঙ্গে কোন পণ্যের কেমন দাম হওয়া উচিত তার সুপারিশ দেবে। সে অনুযায়ী বাজারে তার প্রভাব রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যসচিব ও সংশ্লিষ্ট আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগ খাতভিত্তিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকেই পণ্যের সর্বোচ্চ সীমা ও তা অতিক্রম করলে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে তা জানিয়ে দেয়া হবে।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মো. হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, এ সেল আমদানিকারক দেশ, আন্তর্জাতিক ও নতুন নতুন সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আগে থেকেই পর্যবেক্ষণ করবে। একইভাবে দ্রব্যমূল্য যাতে যৌক্তিক ও সহনীয় হয়, তার জন্য প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ, আমদানি ও বৈশ্বিক মূল্য এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও মজুদ পরিস্থিতির তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংগ্রহ করবে। এ তালিকায় ২৬টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ১০টি পণ্য ধরে কাজ শুরু করেছে দ্রব্যমূল্য পর্যাবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেল।
তিনি বলেন, এ সেলের আরেকটি মুখ্য কাজ হবে যে দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে সে দেশের রফতানি, উৎপাদন পরিস্থিতি ও তাদের নিজস্ব চাহিদার জন্য সংরক্ষণ করা পণ্য পরিস্থিতি যাচাই করে মতামত দেয়া। সে অনুযায়ী পরবর্তী এক বছরের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। চলতি মাসে চালের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করেছে সেল।
সূত্র জানায়, রমজানসহ বিভিন্ন মৌসুম ও উৎসবে পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। অন্যদিকে অনেক সময় চাহিদানুযায়ী পণ্যের প্রযোজনীয় জোগান ও সরবরাহ সংকটও তৈরি হয়। কারণ সম্ভাব্য সংকট ও পণ্যের আমদানি এবং মজুদে ঘাটতির বিষয়টি অনেক সময় সঠিক সময়ে ধরা সম্ভব হয়ে ওঠে না। নবগঠিত এ সেল সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সরকারকে সজাগ রাখবে।
বাণিজ্য সংগঠন আইনের আওতায় পরামর্শক এ সেল গঠন করা হয়। এ সেল অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮১-এর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে তিনজন বাণিজ্য পরামর্শক কাজ করবেন। ইতিমধ্যে নন্দন কুমার বণিক ও জিয়াউর রহমানকে সহকারী বাণিজ্য পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আরও ৮ থেকে ৯ জন জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তীকে এ সেলের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস সেলের কর্মকাণ্ডের ধরন সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের একজন বলেন, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে তারা কৃষি, খাদ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দফতরের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কাজের সমন্বয় করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও কাস্টমস থেকে আমদানি পর্যায়ে পণ্যের এলসি খোলার সংখ্যা, এলসি নিষ্পত্তির মূল্য ও পাইপলাইনে পণ্য আমদানির পরিমাণ যাচাই করে প্রতিবেদন দেবে। টিসিবির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিতরণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। পাশাপাশি টিসিবির গোডাউনে সংরক্ষণের বিষয়ে পর্যালোচনা করে পরামর্শ প্রদাণ করবে। কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ব্যুরো, কাস্টমস ও ট্যারিফ কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে দেশে পণ্যের উৎপাদন, আমদানিকারক দেশের উৎপাদন, আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আগাম পরামর্শ প্রদান করবে। যাতে এক বছর আগেই পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন সংশ্লিষ্টরা।