স্টাফ রিপোর্টার: প্রেমের টানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সীমান্তের মাথাভাঙ্গা নদী পেরিয়ে কুষ্টিয়ায় প্রেমিকের বাড়ি উঠে বিয়ে করে সংসার শুরু করলেও আইন পম্পাকে ঘর করতে দিলো না। শেষ পর্যন্ত তাকে দেশে ফিরতে হলো। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর স্থল চেকপোস্টের অদূরবর্তী স্থানে দু দেশের সীমান্ত রক্ষীদের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ভারতে নেয়া হয়। এ সময় পম্পার চোখে মুখে ছিলো বিষণ্ণতার ছাপ। স্বামীর সংসারে থাকতে না পারার কষ্ট নিয়ে তাকে ফিরতে হলেও গেদে সীমান্তে অপেক্ষামান মাসহ নিকটাত্মীয়স্বজন তাকে কাছে পেয়ে ঝরিয়েছে আনন্দ অশ্রু।
পম্পার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার মুরুটিয়া থানার শিকারপুর গ্রামে। গত ১৪ মে বাড়ির পাশের হাঁটুপানির মাথাভাঙ্গা নদী পাড়ি দিয়ে কুষ্টিয়া দৌলতপুরের ধর্মদাহের আমজাদের কাছে আসে। নদীর এপার ওপার বসেই প্রেম হয় তাদের। সেই প্রেমের সূত্র ধরেই দুজনে বিয়ে করে। সংসারও শুরু করে তারা। অপরদিকে পম্পা বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পরপরই তার বড় ভাই অনুপ মণ্ডল স্থানীয় মুরুটিয়া থানায় আমজাদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। একই সাথে তিনি কোলকাতায় সংলাপ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনকে বিষয়টি জানান। পরে সংলাপ কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতিকে জানিয়ে পম্পাকে উদ্ধারে সহায়তা কামনা করে। ২৪ দিন সংসার করার পর মানবাধিকারকর্মীদের সহায়তায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। আইনানুযায়ী তাকে থানায় নেয়া হয়। আদালতে সোপর্দ করা হলে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার দায়ে আদালত ১৫ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দেন। সাজার মেয়াদ শেষ হলেও তাকে দেশে ফেরত পাঠানো এবং ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে সময় লেগে যায় ৬ মাসের অধিক। অবশেষে গতকাল তাকে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরত দেয়া হয়। এর আগে সকালে কুষ্টিয়া জেলা কারাগার থেকে তাকে বের করা হলে পম্পা বলে, ভারত আমার দেশ। আমজাদ আমার ভালোবাসা। ভালোবেসেই ওর কাছে ছুটে আসা। আইন আমাকে আমার মতো করে সংসার করতে দিলো না।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে দর্শনা জয়নগর সীমান্তের ৭৫ নং মেন পিলারের কাছে বিজিবি-বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পম্পাকে ফেরত দেয়া হয়েছে। কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দর্শনা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার শফিকুল আলম, হাবিলদার জাহিদ শিকদার, দর্শনা জয়নগর ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসআই মাহবুবুর রহমান, দৌলতপুর থানার এসআই আবু তাহের গাজী। বিএসএফ’র পক্ষে ছিলেন, গেদে কোম্পানি কমান্ডার আরকে বোরহা, ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসবি সিং, কৃষ্ণনগর থানার এসআই পংকজ বৈরাগি প্রমুখ।
প্রেমের টানে সীমান্ত মাড়ানো পম্পাকে ফিরতে হলো কষ্ট নিয়ে
