মোবাইলফোনে প্রেমের করুণ পরিণতি : দর্শনা আনোয়ারপুরের আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই
স্টাফ রিপোর্টার/দর্শনা অফিস: একটা করে বিয়ে করে, স্ত্রীর কন্যাসন্তান হলেই বিতাড়িত করতে উঠে পড়ে লাগে। তৃতীয় স্ত্রী সুমার ঝুলন্ত লাশ গতপরশু স্বামীগৃহে দেখে দর্শনা আনোয়ারপুর হঠাতপাড়ার প্রতিবেশীরা এ মন্তব্য করে বলেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতার বাড়ি ফিরে চূড়ান্ত বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেও তৃতীয় স্ত্রী সুমা সে সুযোগ পেলেন না। তার আগেই তাকে লাশ হতে হলো।
গতপরশু রাতে সুমার লাশ তার স্বামী দর্শনা আনোয়ারপুর হঠাতপাড়ার আনোয়ার হোসেনের বাড়ির ঘরে পাওয়া যায়। স্বামীসহ স্বামী গৃহের লোকজন জানান, সুমা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয়রা অবশ্য তা বিশ্বাস করতে পারেনি। সন্দেহ দানা বাধায় কিছু প্রশ্ন দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল সোমবার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপতালমর্গে নেয়। সন্ধ্যায় মৃতদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। পরে মৃতদেহ সুমার পিতার বাড়ি খুলনার দৌলতপুর মানিকতলায় নেয়া হয়। গতরাতেই সেখানে তার দাফন কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়।
জানা গেছে, দর্শনা পৌর শহরের আনোয়ারপুরের খোরশেদ আলমের বাড়ির ভাড়াটিয়া আনোয়ার হোসেন। ৭/৮ বছরের ব্যবধানে আনোয়ার পরপর তিনটি বিয়ে করে। আনোয়ারের আগের দু স্ত্রী আনোয়ারকে ছেড়ে অনত্র ঘর বেধেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রথম স্ত্রী হোসনে আরার পিতার বাড়ি ছিলো ঢাকা বিক্রমপুর। বিয়ে করে দর্শনায় নিয়ে সংসার শুরু করে। কন্যাসন্তান হলে নাম রাখা হয় কেয়া। কন্যাসন্তান হওয়ার পর আনোয়ার নির্যাতন শুরু করতে থাকে। প্রথম স্ত্রী ফিরে যান ঢাকায়। দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দর্শনা পরানপুর কলোনির গোলামের মেয়ে বিউটিকে গ্রহণ করে আনোয়ার। কিছুদিন সংসার করার পর ঘরে আসে কন্যাসন্তান। নাম রাখা হয় মিম। শুরু হয় স্ত্রীর ওপর নির্যাতন। বিউটিও স্বামীর ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। এরপর আনোয়ার। মোবাইলফোনে নানা প্রলোভনে সুমা তার পিতার গচ্ছিত কিছু টাকা নিয়ে আনোয়ারের কাছে ছুটে আসেন। তিন বছর আগে সুমা এলে বিয়ে করে সংসার শুরু করে। সুমা অন্তঃসত্ত্বা হন। কন্যাসন্তান প্রসব করেন। নাম রাখা হয় ফেরদৌসী। আনোয়ার শুরু করে নির্যাতন। ফেরদৌসীর বয়স এখন ১১ মাস। এরই মাঝে গতপরশু রাতে আনোয়ারের ঘরে সুমা গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে প্রচার করা হয়। প্রতিবেশীরা ছুটে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দর্শনা আইসি পুলিশ। আইসি ইনচার্জ এসআই মিজানুর রহমান সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে সোমার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে।
এদিকে সোমার মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজালের। আসলে কি সোমা আত্মহত্যা করেছে, নাকি সোমাকে হত্যা করা হয়েছে? ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের হাতে পৌঁছুলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মন্তব্য দর্শনা আইসির। পুলিশ সুমার স্বামী আনোয়ার হোসেনকে সন্দেহের দৃষ্টিতেই দেখছে বলে সূত্র জানিয়েছে।