সাধারণ মানুষ আবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে

ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়- বাংলাদেশের মানুষের আজ সে রকমই অবস্থা। গত বছরের রাজনৈতিক সংঘাত, সহিংসতা, হরতালের নামে নাশকতা, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা- এসব দৃশ্য এখনো সাধারণ মানুষের মনে দগদগে ঘা হয়ে আছে। এরই মধ্যে গত কয়েক দিন রাজনৈতিক পেশিশক্তি প্রদর্শনের যেসব ঘটনা ঘটেছে এবং আগামী কয়েক দিনের কর্মসূচি নিয়ে যে ধরনের হুঙ্কার ছাড়া হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ আবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের সুযোগ বা ক্ষমতা তাদের নেই। তবে এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য কে কতোটা দায়ী তা তারা নিজের মতো করেই ভাবতে শুরু করেছে। গতকাল গাজীপুরে বিএনপির আহূত জনসভা হয়নি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার কথা ছিলো সেখানে। সমাবেশ প্রতিহত করার লক্ষ্যে একই স্থানে ছাত্রলীগ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করলে স্থানীয় প্রশাসন কাউকেই সমাবেশ করার অনুমতি না দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে। প্রতিবাদে গতকাল গাজীপুরে বিএনপি হরতাল কর্মসূচি পালন করে। একই সাথে আগামী সোমবারও সারাদেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল হরতাল ডেকেছে। সোজাসাপটাভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় গাজীপুরের জনসভা সুষ্ঠুভাবে হলে হয়তো আগামীকাল সোমবারের হরতালে পড়তে হতো আমাদের। তাই হিংসার রাজনীতি আমাদের পরিহার করা দরকার।

এর আগে গত বুধবার দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেয়াকে কেন্দ্র করে বকশিবাজার এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় একজন অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা সরকারদলীয় এমপি ছবি বিশ্বাসও হামলার শিকার হন এবং গুরুতর অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন প্রশ্ন হলো, গণতন্ত্রে যেকোনো দলের সভা-সমাবেশ করার যে অধিকার তা প্রতিহত করা হবে কেন? বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের বিপরীতে বিভিন্ন জায়গায় মামলা হয়েছে এবং অনেক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। কেউ অপরাধ করলে তার বিচার আইনের মাধ্যমেই করতে হবে। আবার বিএনপি নেত্রী আদালতে হাজিরা দেবেন, সেখানে লাঠি হাতে মিছিল করে কয়েক হাজার ছাত্রদল-যুবদলকর্মীকে টেনে নেয়া কেন? এটি স্পষ্টতই আদালত অবমাননা, বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা এবং বিচারকদের ওপর প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা। কিন্তু সে জন্য ছাত্রলীগ কেন তাদের বাধা দিতে যাবে? অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তা নিয়ন্ত্রণ করবে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা ছাত্রলীগের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেছেন; কিন্তু পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত খবর ও ছবিগুলো আমাদের ভিন্ন কথাই বলে।

বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার কথা বলছে। কিন্তু অসুস্থ রাজনীতি যদি দেশকে আবার গ্রাস করে, তাহলে উন্নয়ন তো দূরের কথা, দেশ যে পেছনে হাঁটবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আমরা আশা করি, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী পক্ষে থাকা সব রাজনীতিবিদ তাদের কথায় ও কাজে সহনশীলতার পরিচয় দেবেন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখবেন।