দেশের দক্ষিণ-পশ্চমাঞ্চলে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা, ঈশ্বরদী, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগসহ যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও টাঙ্গাইল অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। পাবনার ঈশ্বরদীতে গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যে, ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ সেলসিয়াসের আশপাশে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা গতকাল শনিবার ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে বলে জানা গেছে। এদিকে গতরাত সাড়ে ১০টায় আকস্মিক চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ এলাকায় কুয়াশায় ঢেকে যায়। লাইট জ্বেলেও যানবাহন খুব সাবধানে চলাচল করে।

Rangpur+cold+(8)

এদিকে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা অফিস জানায়, এ বছর এ পর্যন্ত এটাই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার কারণে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। আসছে দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা নেই। হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভিড় করছে।

ডিঙ্গেদহ/সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদরের ছয়ঘরিয়া চাকরিজীবী সেবা সঙ্ঘের উদ্যোগে দুস্থ ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শরিবার সকাল ১০টায় ছয়ঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ছয়ঘরিয়া সেবা সঙ্ঘের সভাপতি সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোতাহের হোসেনের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা এএসপি মতিয়ার রহমান। সরোজগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেনের উপস্থাপনায় কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, রংপুর মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার শামীম কবির, খুলনা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার এমএ রশিদ, ঝিনাইদহ সহকারী কমিশনার ভুমি শাহানাজ পারভীন, যশোর ক্যান্টনমেন্টের মেজর আরজিনা, ঝিনাইদহ সাবরেজিস্ট্রার আব্দুল হাফিজ, মেহেরপুর জেলা মার্কেটিং অফিসার শহীদুল ইসলাম, ঝিনাইদহ সিআইডি’র এএসআই ফারুক হোসেন, খুলনা সিআইডি’র এএসআই তুহিন, লালমনিরহাট সার্কেল অফিসের এএসআই আকরাম হোসেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসরাম মালিক, কালুপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান, নতিপোতা ইউপি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

ঘোলদাড়ি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর বাজারের শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে আলমডাঙ্গার আইলহাস ইউনিয়নের বলেশ্বরপুর বাজারে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন- শারিফুজ্জামান শরিফ, আইলহাস ইউপি চেয়ারম্যান মিনজান উদ্দিন, বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান তোবারক হোসেন, ভাংবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন লাড্ড, জেহালা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক রোকন, নাগদাহ ইউপি চেয়ারম্যান দারুস সালাম, যুবনেতা, হারুন, মন্টু, আজাদ, সেলিম, সুজন, সোহেল, আশাদুল, ইয়ারুল, টুন, লিটন মাসুদ প্রমুখ।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশায় জনজীবনের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। সকাল থেকে লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ঠাণ্ডাজনিত ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। মেহেরপুরে শীত জেঁকে বসেছে। কনকনে ঠাণ্ডা আর উত্তরের হিমেল হাওয়া মেহেরপুরবাসীর জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ভোর থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত থাকছে ঘনকুয়াশা। বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন লাইট জ্বালিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে রাস্তায় চলাচল করছে। এরপরও ঘটছে ছোটখাটো দু একটি সড়ক দুর্ঘটনা। এদিকে কুয়াশা কেটে গেলেও বেলা একটা-দুটো পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। জরুরি কাজ থাকলেও লেপ-কাঁথা ছেড়ে অনেকে উঠতে পারছেন না অনেকে। গরম কাপড়ের অভাবে গরিব মানুষের কষ্ট বেড়ে চলেছে। বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষে গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য শীতবস্ত্র প্রদান করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

মানুষ লেপ-কাঁথা ছেড়ে বাইরে বের হলেও খড়-কুটো জ্বেলে শরীরে আগুন তাপাতে দেখা যাচ্ছে। শুধু সকালে নয়। দিনের যেকোনো সময় শিশু-কিশোরদের খড়-কুড়োর আগুনে শরীর তাপাচ্ছে। শীতের কারণে সন্ধ্যায় শহরের দোকান-পাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে শহরের অধিকাংশ দোকান-পাট খুলছে অনেক দেরিতে। রিকশা-ভ্যান চালকসহ শ্রমজীবী মানুষ শহরের চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে চায়ের দোকান থেকে রিকশা-ভ্যান চালকদের খুঁজে বের করতে হচ্ছে।

গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অনেকে। শীতে কাঁপছে ছাগল-গরু। পাটের চট, ছালা-বস্তা আর ছেঁড়া কাপড় জড়িয়ে অনেকে গরু-ছাগলকে শীতের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। দিনের পর দিন ঘন কুয়াশায় তাদের বোরো বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বীজতলার চারা নষ্ট হলে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কষ্টকর হবে।

ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ার কারণে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ক্লিনিকগুলোতে দিনদিন শিশুরোগী বাড়ছে। কোল্ড অ্যালার্জিতেও ভুগছেন অনেকে। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অলোক কুমার দাস এ শীতে শিশুদের ঘরের বাইরে বের না করা ও গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখার পরামর্শ দেন।

মেহেরপুর অঞ্চলে গত কয়েকদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করার পর গতকাল শনিবারের তাপমাত্রা আরো কমেছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল শনিবার সকাল নয়টায় এ অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। যা এ মরসুমে এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

উত্তরের হিমেল হাওয়া আর মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের সাথে কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে গোটা এলাকা। বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। সময়মতো কাজে যেতে পারছেন না। দুপুর পর্যন্ত আগুনের উঞ্চতা নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকেই। অন্যদিকে শিশু বয়োবৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন অনেকেই। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। তাই চায়ের দোকানে কিংবা বাড়িতে বসে সময় পার করছেন বেশির ভাগ মানুষ।