শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসুক সকলে : লাঘব হোক দুস্থদের দুর্ভোগ

অবশ্যই দান তথা দয়া-দাক্ষিণ্যের প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। দুস্থরা তথা দরিদ্ররা দারিদ্র্য সীমারেক্ষার নিচেয় থাকবে আর বিত্তবানরা ঘুরে ফিরে দয়া দেখাতে যাবে তাও সভ্যসমাজের স্থায়ী চিত্র হতে পারে না। এরপরও শীতে দুস্থদের দুর্ভোগ লাঘবে শীতবস্ত্র বিতরণে দানশীল, অর্থশালী ব্যক্তিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কেন? সমাজকে আমরা আজও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিতে পারিনি বলেই দয়া দেখানোর তাগিদ পদে পদে পরিলক্ষিত হয়, হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গায় শীতের সময় তীব্র শীত, গরমের সময় অসহনীয় গরম। ভৌগোলিক কারণেই ষড়ঋতুর দেশে প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করেই চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রাণিকূলকে বাঁচতে হয়। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, এলাকার মানুষ চাষাবাদে বিপ্লব ঘটিয়ে অভাব ঘোচালেও শতভাগ সচ্ছল হতে পারেনি। দরিদ্র মানুষগুলোকে তিন বেলা তিন মুঠো খাবারের জন্য ছুটতে হয়। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে মজুরি তাতে নুন-ভাত জুটলেও শীতবস্ত্র ক্ষুধার্তের সেই পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝলসানো রুটি হয়েই থাকে। তীব্র শীতের দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকাল-সাঁঝে খড়কুটোর আগুনই ভরসা হয়ে ওঠে। দিনে? তাও যদি সূর্যের দেখা মেলে। আর রাত? শৈত্যপ্রবাহের মাঝে চাটাইয়ের বেড়ার ঘরে শীতবস্ত্রহীন কেমন কাটে তা বিত্তবানদের উপলব্ধি করতে হবে। মূলত এ কারণেই দুস্থদের মাঝে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণের তাগিদ। প্রশ্ন আসতেই পারে, তাই বলে প্রতিবছর শীতেই কেন শীতবস্ত্র দিতে হবে? যাদের চাল চুলোরই ঠিক থাকে না, গরমে তাদের শীতবস্ত্র সংরক্ষণ অলীক নয় কি?

চুয়াডাঙ্গায় পরপর তিন দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দশমিক ১ কম রেকর্ড করা হয়। যশোরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪। আর চুয়াডাঙ্গায় গতকাল ছিলো ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতপরশু চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। পরশুর তুলনায় গতকাল তবে কি শীত কিছুটা কম অনুভূত হয়েছে? মোটেই না। কারণ, চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতপরশুর তুলনায় গতকাল এক লাফে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে ১৮ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে এসে থেমেছে। সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রার এ চিত্র বিশ্লেষণ করলে শীতের তীব্রতা কতোটা বেড়েছে তা বোদ্ধা মাত্রই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আর যারা শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগের শিকার তাদের দশা কতোটা করুণ তা তারা ছাড়া ক’জনই আর অনুধাবন করছেন! শীতবস্ত্র ফি-বছর সরকারিভাবেও বিতরণ করা হয়। অবাক হলেও সত্য যে, শীতের তীব্রতা কমার পরও শীতবস্ত্র বিতরণের তোড়জোড় পরিলক্ষিত হয়। শীতবস্ত্র যখন বিতরণ করা হবেই তখন আগেভাগে প্রকৃত দুস্থদের মাঝে সরবরাহ করা হলে দুর্ভোগের যে লাঘব হয় তা বলাই বাহুল্য।

শীতবস্ত্র বিতরণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ লাঘবে সহায়ক। দান যেহেতু স্থায়ী সমাধান নয়, সেহেতু দারিদ্র্য বিমোচনে বাস্তবমুখি পদক্ষেপই কাম্য। যদিও বাস্তবতার আলোকে তা রাতারাতি সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান গড়ে তোলার বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে পারলেই পাল্টে যাবে চিত্র। আগামী দিনের জন্য কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে এখনই দায়িত্বশীলদের সোচ্চার হতে হবে। বর্তমানের দুর্ভোগ লাঘবে কালবিলম্ব না করে শীতবস্ত্র বিতরণে সামর্থ্যদের এগিয়ে আসতে হবে। উদ্বুদ্ধ করতে হবে অর্থশালী সকলকে।