স্টাফ রিপোর্টার: গাজিপুরে আজ হরতাল। সারাদেশে ২০ দলীয় জোট বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গাজিপুর জেলা জুড়ে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ছিলো চরম উত্তেজনা। ভয় আর শঙ্কা নিয়ে গতকাল রাস্তায় বের হন সাধারণ মানুষ। টান টান উত্তেজনার মধ্যে দুপুরে জেলায় ১৪৪ ধারা জারির কথা জানান পুলিশ সুপার।
তবে বিকেলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, শুধুমাত্র সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। জেলার অন্য কোথাও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণার পর রাত পর্যন্ত সমাবেশ করার বিষয়ে দু পক্ষ থেকেই কড়া বক্তব্য এসেছে। সমাবেশ করার বিষয়ে জানানো হয়েছে অনড় অবস্থানের কথা। এমন অবস্থার মধ্যেই রাতে করণীয় নির্ধারণে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিঙে জোটের সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় মির্জা আলমগীর ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন ২০ দলীয় জোট কেন্দ্রীয় ও গাজীপুর জেলার তরফে নেয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ফজলুল হক মিলন জানান, খালেদা জিয়ার সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারির প্রতিবাদে শনিবার গাজীপুর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে ২০ দল। এ সময় মির্জা ফখরুল জানান, একই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ করবে ২০ দল। তিনি বলেন, গাজীপুর সরকারি ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে ২০ দল আয়োজিত শনিবারের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার কথা ছিলো বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার। কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি এবং প্রশাসনকে অবহিতও করা হয়েছিলো। কিন্তু সরকার ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। পুলিশের ছত্রছায়ায় আক্রমণ ও গোলাগুলি করে ছাত্রলীগ কলেজ মাঠ দখল করে রাখে। শেষে পুলিশ সারা জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। এভাবেই ঢাকা মহানগরে দেড় বছর ধরে সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে সরকার। গাজীপুরেও অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি তারই ধারাবাহিকতা। তিনি বলেন, ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত ও গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হলো। অবৈধ সরকার এভাবে বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চৌরাস্তার মোড় ও সমাবেশ স্থল ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ দখলে নেয় ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন অলিগলি ও সদর রাস্তায় একের পর এক মিছিল করে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন নিয়ে লাঠিসহ মহড়া দেয়। এরপরই যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাজীপুর জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত ওই আদেশ বলবৎ রাখার ঘোষণা দেন পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, দু পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে গাজীপুরের কোথাও কাউকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। পুলিশ সুপার বলেন, দু পক্ষই কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার স্বার্থে কোন পক্ষকেই সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে না প্রশাসন।
পুলিশ সুপার জেলাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারির কথা বললেও জেলা প্রশাসক জানান, পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণায় উত্তেজনা থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণত ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা, সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সমাবেশ যেহেতু ভাওয়াল কলেজ মাঠে হওয়ার কথা রয়েছে, তাই ১৪৪ ধারা শুধু কলেজ মাঠেই জারি করা হয়েছে। জেলার অন্য কোনো স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়নি। জেলার অন্য স্থানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। দুপুর ২টা থেকে পুরো গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারির কথা পুলিশ সুপার জানালেও বিকেল সোয়া ৪টায় পুলিশের সামনেই মিছিল বের করে জেলা শ্রমিক লীগ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মতিউর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে মিছিলটি শহরের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে ছাত্রলীগের পাশাপাশি সকাল থেকেই সমাবেশস্থল ও আশপাশে এলাকা দখলে নেয় গাজীপুর জেলা আওয়ামী যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুরে একটি খোলা গাড়িতে করে যুব মহিলা লীগের অর্ধশত নেতাকর্মী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে এসে পৌঁছান। জেলা আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি সুস্মিতা সাহার নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে কলেজ মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন তারা। তবে কলেজ গেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বাধায় ভেতরে যেতে ব্যর্থ হন। পরে মিছিল নিয়ে জয়দেবপুর জাগ্রত চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে চলে যান। সকাল পৌনে ১০ টায় জয়দেবপুর জাগ্রত চৌরঙ্গী মোড়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন আওয়ামী কৃষক লীগের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা।