স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের দায়ে সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি অভিযোগেই তাকে পৃথকভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অর্থাত তিনি সাতটি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ করেছেন। হত্যা, নির্যাতন ও লুটপাটের আরো চার অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ২২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। আর প্রমাণিত না হওয়ায় দুটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। রায়ে প্রতিটি অভিযোগেই মো. কায়সারকে পৃথকভাবে দণ্ড দেয়া হয়েছে। তবে সাতটি মৃত্যুদণ্ডের একটি কার্যকর হলে বাকি সাজা স্বাভাবিকভাবেই একীভূত হয়ে যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। এটা যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত দু ট্রাইব্যুনালের চতুর্দশ রায়। দু পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২০ আগস্ট মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। কায়সার বাদে দুই ট্রাইব্যুনালে আরো তিনটি মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর এর আগে যে ৩টি মামলায় রায় হয়েছে তার মধ্যে আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে কেবল জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
সৈয়দ মো. কায়সারের ফাঁসির আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ ও সরকার। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রায়ের পর সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবেই চলছে। কায়সারের ফাঁসির রায়কে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের ও যুদ্ধশিশুদের প্রতি উত্সর্গ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে আমরা আনন্দিত। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা আনন্দ মিছিল করেছে। তবে রায়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি আসামিপক্ষ। আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে, আমরা আপিল করবো। আশা করি, আপিল বিভাগে ন্যায় বিচার পাব।
দীর্ঘ প্রায় চার মাস পর মো. কায়সারের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনালসহ সুপ্রিম কোর্টের আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। তবে কড়া নিরাপত্তা চোখে পড়েনি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থান সংকুলান না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাস কক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে কায়সারকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় আনা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারক এজলাসে আসেন ১১টা ২ মিনিটে। সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য দিয়ে রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ৪৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শেষ হয় সোয়া ১২টার দিকে। রায়ে একটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে সাজা দেয়া হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলোতে সর্বসম্মতিতে সাজা ও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। রায়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণও দেয়া হয়েছে। কায়সারের মামলার রায়ে প্রথমবারের মতো যুদ্ধশিশু ও নারী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষতিপূরণ স্কিম চালু ও তাদের পুনর্বাসনে রাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেখানোর জন্য বলা হয়েছে।