বিশ্ববাজারের সাথে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হোক

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমতে কমতে ৬ মাসে প্রায় অর্ধেকে নেমে এলেও এর সাথে সঙ্গতি রেখে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে না। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে আসায় ভারতসহ অনেক দেশেই জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমানো হয়েছে। তাহলে আমাদের ভোক্তাদের এর সুফল থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে কেন? বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশে গত ৫ বছরে চার দফা বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। সেই একই যুক্তিতে এখন অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়? সরকারের পক্ষ থেকে সেই প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছিলো। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে যখন সর্বশেষ তেলের দাম বাড়ানো হয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিলো ব্যারেল প্রতি ১২২ ডলার। আর গত বৃহস্পতিবার এ তেল বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫৬ দশমিক ৬৭ ডলারে। অর্থাৎ সে তুলনায় অর্ধেকেরও কম দামে। অথচ আমাদের সরকার এ ব্যাপারে এখনও নির্বিকার। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, এক্ষেত্রে কার স্বার্থ দেখা হচ্ছে? বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়টি জনস্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। তেলের দাম বাড়লে বিদ্যুৎ, পানি ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। বৃদ্ধি পায় পণ্যের উৎপাদন মূল্য। বাজারে এর প্রভাব পড়ে সরাসরি। একই সাথে দ্রব্যমূল্য, পরিবহন ব্যয় ও সেবা খাতের মূল্য বৃদ্ধি জনগণের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে দেখা দেয়। সরকার যতবার তেলের দাম বাড়িয়েছে, ততবার এর ধকল সইতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।

এছাড়া উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমানে যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে, তখন সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতো দেশের জনগণ ও শিল্প খাত। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। বিশেষজ্ঞ ও ওয়াকিবহাল মহল বলছে, জ্বালানি তেল ক্রয়কে কেন্দ্র করে যে বড় ধরনের দুর্নীতি চলে আসছে, সে সুযোগ বহাল রাখার জন্যই সংশ্লিষ্টরা তেলের দাম কমাচ্ছে না। এছাড়া তেলভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা বলে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যে পাঁয়তারা করছে, এর পেছনেও তেলের দাম না কমানোর কারণ নিহিত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, সরকার কি তবে জনস্বার্থের চেয়ে বিশেষ মহলের স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে? এমন নীতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমার ফলে দেশে যে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে, সরকারের উচিত তা কাজে লাগানো। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আভাস দিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যহ্রাস বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। পাশাপাশি শিল্প খাতের অবস্থান ভালো হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে। কাজেই বিশ্ববাজারের সাথে সমন্বয় করে অবিলম্বে দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হোক।