বাংলাটিমের রেজাউলকে খুঁজছে ডিবি : আসতে পারে এফবিআই
স্টাফ রিপোর্টার: হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালিয়ে সারাবিশ্বে এ নিয়ে হই চই ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের। ড্রোন তৈরির মূল পরিকল্পনাকারীর নাম রেজাউল কবির। বাংলাটিমের ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা বা সক্ষমতার বিষয়টি তদন্ত করতে ঢাকায় আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) একটি দল। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এ রেজাউলকে ২০১০ সালে ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার থাকা অবস্থায়ও একবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো এফবিআই।
ড্রোন তৈরির চেষ্টার অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেফতার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দু সদস্য তানজিল হোসেন বাবু ও গোলাম মাওলা মোহনের দেয়া তথ্য ও এফবিআই-এর যোগাযোগ সূত্রের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা বাংলা টিম সদস্য রেজাউলকে খুঁজছে গোয়েন্দারা।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, রেজাউল কবির ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়ে বেশ কিছুদিন কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি জামিনে বের হয়ে এসে আগের মতোই জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরেছেন। ড্রোন তৈরির পরিকল্পনার ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত দুই জঙ্গি সদস্যের সঙ্গে রেজাউলের যোগাযোগ ছিল।
ডিবি সূত্র জানায়, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ২০১০ সালে রেজাউল কবিরকে গ্রেফতার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সে সময় এফবিআইয়ের তিন সদস্যের টিম বাংলাদেশে এসে তাকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে। এফবিআই তখন রেজাউলের সঙ্গে মিশর, তুরস্ক, সিরিয়া ও পাকিস্তানভিত্তিক কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের নিম্নপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার তথ্য পায়। ঢাকার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে রেজাউলকে আদালতের মাধ্যমে তখন কারাগারে পাঠায়।
ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম ড্রোন নিয়ে কাজ করার আগে রেজাউল বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। ২০১০ সালে তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের উদ্বৃতি দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, ড্রোন নিয়ে কাজ করার আগে রেজাউল তত্কালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পিছনে উত্তরা এলাকার একটি তিনতলা বাড়ির চিলেকোঠা ভাড়া নিয়েছিলেন। মাস তিনেক সেখানে অবস্থান করার পর তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সেদেশেও একটি বিমানবন্দরের কাছে বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন রেজাউল। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের বিষয়টি ভালভাবে বুঝতেই তার এসব বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানের মূল কারণ। কিছুদিন সেখানে থাকার পর রেজাউল মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাড়ি জমান। সেখানে একমাস অবস্থান শেষে দেশে ফেরার পরই ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্য বাবু ও মোহনের কাছ থেকে ‘ড্রোন’ বা কোয়াড হেলিকপ্টারের মতো রিমোর্ট কন্ট্রোল চালিত ‘ফ্লাইং অবজেক্ট’ তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। এতে ধারনা করা হচ্ছে, ড্রোন বা কোয়াড হেলিকপ্টার তৈরি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি তুলে সেসব স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবু ও তার সহযোগী মোহন পলাতক রেজাউল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। ডিবি পুলিশের ভাষ্যমতে, যাত্রাবাড়ীর একটি বাসায় বাবু-মোহনসহ ছয়জন মিলে ড্রোন তৈরির চেষ্টা কাজ করছিল। ডিবির অভিযান চলাকালে অপর চার জঙ্গি পালিয়ে যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাকৃতরা ডিবিকে জানান, আনুমানিক ২০০ ফুট উচ্চতায় উড়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম এমন কোয়াড হেলিকপ্টার বা ড্রোন তৈরির সক্ষমতা অর্জনের জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছিল। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ভূমি থেকে ভূমিতে আক্রমণ কষ্টসাধ্য বলে আকাশ পথে আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল তারা। কমপক্ষে ৩০ কেজি ওজনের বোমা বহনে সক্ষম এমন কোয়াড হেলিকপ্টার তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা ছিল তাদের। ডিবির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, রেজাউলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশে জঙ্গিরা ড্রোন তৈরির চেষ্টা করছে- এমন খবর জানার পর এফবিআই এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। প্রয়োজনে এফবিআই সদস্যরা বাংলাদেশে আসারও চিন্তাভাবনা করছে।
২০০৮ সালে আবির্ভাব ঘটে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের। এ সংগঠনে নিষিদ্ধ জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের নেতাকর্মীরা রয়েছে। গত বছরের আগস্টে বরগুনা থেকে এ সংগঠনের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৩১ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর এরা আলোচনায় আসে। পরদিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে জসীমের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিডিসহ জঙ্গি সংশ্লিষ্ট বিপুল সংখ্যক বই উদ্ধার করে।