বিটিভির জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় আলমডাঙ্গার রায়সা গ্রামের রজনীর সাফল্য

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার রায়সা গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে রজনী দেশ সেরার মুকুট নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় ফিরেছে। বিটিভির আয়োজনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় সারাদেশে লালনগীতিতে ২য় ও নজরুল সঙ্গীতে ৩য় স্থান অধিকার করার গৌরব ছিনিয়ে এনেছে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এ শিশুকন্যা। আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্র থেকে ক বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ইতঃপূর্বে থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সে লালনগীতি, নজরুল সঙ্গীত ও পল্লীগীতিতে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে তৃণমূল থেকে শিল্পী বাছাইয়ের লক্ষ্যে সারাদেশে থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ছাত্রী রজনী খাতুন (১০) আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের ছাত্রী হিসেবে প্রতিযোগিতায় ক গ্রুপে নাম লেখায়। থানা ও জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ক বিভাগে সে অসাধারণ কৃতীত্বের পরিচয় দিয়ে লালনগীতি, নজরুল সঙ্গীত ও পল্লীগীতিতে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এরপর গত ২৬ নভেম্বর বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে খুলনার পিটিআই ইন্সটিটিউটে ছুটে যায়। ওই প্রতিযোগিতায় লালনগীতি ও নজরুল সঙ্গীতে ১ম স্থান ও পল্লীগীতিতে ২য় স্থান লাভ করে। পরে খুলনা বিভাগের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় আর সাতজন প্রতিযোগির সাথে অংশ নেয়। গত ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় রজনী লালনগীতিতে সারাদেশে ২য় ও নজরুল সঙ্গীতে ৩য় স্থান লাভের সাফল্য অর্জন করে। লালনগীতি প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীন, আকরামুল ইসলাম ও আবু বকর সিদ্দিকী এবং নজরুল সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন শিল্পী ফাতেমাতুজ্জোহরা ও ড. লীনা তাপসীসহ ৩ জন। ওই সময়ই তার পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত লালনগীতি ও নজরুল সঙ্গীতের শিশুশিল্পী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা বেতারও তাকে একই রকম সুযোগ করে দিয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম রায়সার মোহাম্মদ লিটনের মেয়ে রজনী খাতুন। হতদরিদ্র লিটন গ্রামের বাজারে মাছ বিক্রি করে কোনোভাবে সংসার চালান। এমন অভাবের সংসারে মেয়ে রজনী যেন চাঁদের টুকরো। দু মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে রজনীর খুব ছোটবেলা থেকেই শখ গান করার। যতো বড় হয় ততোই গানই তার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠে। মেয়ের কণ্ঠে সুরের সুষমা ঝরে পড়ে যেন! দরিদ্র বাপ-মা তার কণ্ঠের অমীয় সুধা তন্ময় হয়ে পান করতেন। ভাবতেন তাদের এ হিরের টুকরোর আলো কীভাবে বিকীর্ণ করবেন? এরই মাঝে মেয়ে আর একটু বড় হয়ে উঠলো। গ্রামের স্কুলসহ আশপাশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতে শুরু করলো। এতো ছোট শিশুর কণ্ঠের অসামান্য কারুকাজে এলাকাবাসী তো পঞ্চমুখ! সকলে রজনীর পিতা লিটনকে পরামর্শ দিলো মেয়েকে নিয়ে আলমডাঙ্গা শহরে চলে যাও। যেকোনোভাবে একজন উপযুক্ত ওস্তাদের নিকট সোপর্দ করে এসো। তোমার মেয়ের সুরের শিল্পে মুগ্ধ হয়ে হয়তো সে ওস্তাদ বিনা পয়সায় গান ভালো করে গান শেখাবে। সকলের কথায় বুকে সাহস বেঁধে তিনি আলমডাঙ্গায় স্বল্পমূল্যে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করলেন। রজনীকে তিনি গান শেখাতে ভর্তি করলেন আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রে। কিছুদিনেই রজনী কলাকেন্দ্রের সভাপতি ইকবাল হোসেন ও সম্পাদক রেবা রাণী সাহার সুদৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। ফলে সম্পূর্ণ বিনা অর্থে এগিয়ে যায় গান শেখার কাজ। এমনকি পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও তাকে নিজ খরচেই তারা অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। মেয়েকে তিনি আলমডাঙ্গা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিলেন। ওই বিদ্যালয়ে সে এখন ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। এরই এক পর্যায়ে কলাকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে তাকে বিটিভির এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে সকলের মান রেখেছে।

তাৎক্ষণিকভাবে এ সংবাদ পেয়ে রজনী ও কলাকেন্দ্র্রের সভাপতি ও সম্পাদককে অভিনন্দন জানিয়েছে আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, পৌর মেয়র মীর মহি উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম।

Leave a comment