চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড : মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

তীব্র শীতে দুস্থদের দুর্ভোগ : পুরাতন শীতবস্ত্রের দোকানে দরিদ্রদের ভিড়

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে কনকনে শীত জেকে বসেছে। আবহাওয়া অফিস বলেছে, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, পাবনা ও রাজশাহীর ওপর দিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

তীব্র শীতে দুস্থ শীতার্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে। দরিদ্রদের অধিকাংশকেই শহর ও গ্রামের হাটবাজারের ফুটপথে বসা শীতবস্ত্র দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। তীব্র শীতে পুরাতন শীতবস্ত্রের দামও হাঁকতে শুরু করেছেন বিক্রেতারা। অপরদিকে শীতবস্ত্র বিতরণে এবার এখন পর্যন্ত তেমন তোড়জোড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে কিছু দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অপরদিকে শীতপ্রধান এলাকায় দুস্থদের দুর্ভোগ লাঘবে শীতবস্ত্র দ্রুত পৌঁছুনোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে গ্রামবাংলায় কুমড়ো-কলাইর বাড়ি দেয়ার ধুম পড়েছে। ক’দিন ধরেই বড়ি দেয়া নিয়ে ব্যস্ত গ্রামবাংলার গৃহিণীরা। তারা বলেছেন, রাতে তীব্র শীত, দিনে ঝলমলে রোদ কুমড়ো-কলাইর বড়ি দেয়ার সঠিক সময়। আবার কবে কখন মেঘলা হয় কে জানে। ক’দিন আগেও মেঘলা ও কুয়াশার কারণে বড়ি দেয়া যায়নি। কুয়াশা কেটেছে। আকাশে তেমন মেঘও নেই। ফলে এখনই কুমড়ো বড়ি দেয়ার সুযোগ। এ সুযোগকে হাত ছাড়া করতে নারাজ গ্রামবাংলার গৃহিণীরা। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফ ও রাঙ্গামাটিতে ২৭ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৯ দশমিক শূন্য। উত্তরবঙ্গের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো সৈয়দপুরে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদফতর আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলেছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মাদারীপুর, রাজশাহী, পাবনা, সৈয়দপুর, যশোর, কুষ্টিয়া ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চল সমূহের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা রংপুর বিভাগে বিস্তার লাভ করতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

রংপুর বিভাগে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দেশের অন্যত্র প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা থাকছে গোটা এলাকা। এদিকে বিকেল হতে না হতেই শীতের তীব্রতা নেমে আসছে। হাঁড়কাপানো কনকনে শীত অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল অসহায় শ্রেণির মানুষ পুরাতন কাপড়ের দোকানে ভিড় জমাচ্ছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে গরম কাপড়ের দাম থাকায় শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড়ের দোকানে মানুষের ভিড় বাড়ছে। এ উপজেলা তীব্র শীতে যবুথবু অসহায় মানুষের একমাত্র ভরসা এসব কাপড়ের দোকান। উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিঅ্যান্ডবির পুরাতন ডাকবাংলোর ভেতরে বসেছে পুরাতর কাপড়ের মার্কেট। বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়দের সব ধরনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এসব দোকানে। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব দোকানে ক্রেতাদের উপচে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে এসব দোকান।

অপরদিকে জীবননগর বাঁকা হাটপাড়ায় ছিন্নমুল শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বাঁকা হাটপাড়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির উদ্যোগে সমিতির সভাপতি বাবুল আক্তার এ কম্বল বিতরণ করেন। আব্দুস শুকুর মাস্টারের সভাপতিত্বে কম্বল বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক মোশারফ হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন জীবননগর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন, জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুন্সি নাসির উদ্দীন প্রমুখ।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বল্লভপুর ঘাটপাড়ায় এ শীতবস্ত্র প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- মুজিবনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জারজিস হুসাইন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান গুলনাহার বেগম, খায়রুল বাসার প্রমুখ।

Leave a comment