পুলিশি তদন্তে মেধা ও পেশাদারত্বের প্রকাশ প্রত্যাশী

‘যেভাবে মামলা করতে চেয়েছিলাম, সেভাবে মামলা নেয়া হয়নি। পুলিশ যেভাবে এজাহার লিখে দিয়েছে সেটাই মেনে নিয়ে তাতে স্বাক্ষর করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, মূল সন্দেহভাজনকে পুলিশ ধরেনি। আত্মগোপনের পর তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দেয়া হলেও পুলিশের পক্ষে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।’ এ অভিযোগ চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার আনন্দধামপাড়ার ভাড়ার বাসায় নির্মমভাবে হত্যার শিকার স্কুলছাত্রী তাহেরা খাতুনের পিতা শাজাহান আলীর। তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পুলিশি তদন্তে আস্থা রাখতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেছেন।

আলমডাঙ্গার আনন্দধামে স্কুলছাত্রী তাহেরা খাতুনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর মৃতদেহের ওপরও চালানো হয়েছে নির্যাতন। তার আলামতও স্পষ্ট। দিনদুপুরে বাড়িতে একা পেয়ে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। যখন ঘটনাটি ঘটেছে তখন ওই বাড়িতে কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তারা কিছুই টের পাননি? সঙ্গত কারণেই প্রশ্নটি জনমনে দানা বেধেছে। পুলিশের মধ্যে এ প্রশ্ন কতোটা নাড়া দিয়েছে? পুলিশের দৃষ্টিতে সন্দেহভাজনদের মধ্যে প্রাইভেট টিউটরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার বাদীর মূল সন্দেহভাজনদের শীর্ষে বাড়ির মালিকের ছেলে বাচ্চু। তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। মামলার বাদীর অভিযোগ, গোপনে বাচ্চুর অবস্থান জানার পর পুলিশকে জানানোর পরও পুলিশ তাকে ধরতে বিশেষ তৎপর হয়নি।

একটি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত নেপথ্য উন্মোচনে এক সপ্তা খুব সামান্য সময়। অবশ্যই প্রকৃত দোষীর বদলে নির্দোষ কোনো ব্যক্তি হয়রানির শিকার হোক তা আশা করা অবান্তর। এটা চাওয়া অন্যায়। নির্দোষ ব্যক্তির হয়রানি শুধু আইন অসমর্থিতই নয়, বিবেক বর্জিতও বটে। স্কুলছাত্রী তাহেরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে যখন সাধারণ মানুষ রাজপথে, তখন মতলববাজদের কয়েকজন শান্তিপ্রিয় ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ যদি আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের এ মামলার আসামি করে তা হলে মতলববাজদের উদ্দেশ্য শতভাগ পূর্ণ হয় না কি? পুলিশের দায়িত্বশীল কর্তার এদিকে যেমন বিশেষ নজর দেয়া দরকার, তেমনই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদেরও ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। তা না হলে নেতৃত্বদানে ব্যর্থতারই বহির্প্রকাশ ঘটে।

তাহেরা খাতুন আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। লেখাপড়া নিয়ে যখন কেটেছে তার ব্যস্ত সময়, তখন তাকে উত্ত্যক্ত করেছে কেউ কেউ। কুপ্রস্তাবে সাড়া না পেয়েই কি নির্মম নৃশংস হয়ে উঠেছে কেউ? তা না হলে হাতে কেন ধারালো অস্ত্র দিয়ে লেখা হলো ওই উক্তি? হত্যার পর লাশের ওপরই বা কেন পাশবিক নির্যাতন? পুলিশকে প্রকৃত ঘাতক শনাক্ত করতে হবে। হত্যাকারীদের ধরে আইনে সোপর্দ করা কর্তব্যেরই অংশ। কোনো কারণে প্রভাবিত বা পক্ষপাতিত্ব পুলিশ বিভাগকেই কলুষিত করবে। পুলিশি তদন্তে মেধা ও পেশাদারত্বের প্রকাশ প্রত্যাশী আমরা।