শাহনেওয়াজ খান সুমন: বাঙালি জাতির আনন্দের দিন। বাংলার দামাল ছেলেদের রক্তে অর্জিত ১৯৭১ সালের এ দিনে বাংলাদেশের মাটিতে বিজয়ের পতাকা ওড়ে। দেশের মাটিকে মা মনে করে যে সাহসী সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এ দেশে লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে এনেছিলো। এখন পর্যন্ত যদি তাদের মধ্যে থেকে কোনো মুক্তিযোদ্ধা অবহেলিত হয় তাহলে সেটা জাতির জন্য খুবই লজ্জাকর। যে সকল মা, বোনদের ইজ্জত ও যাদের বুকের তাজা রক্তে অর্জিত এ স্বাধীন দেশের মাটিতে পত পত করে লাল সবুজের পতাকা উড়ছে, তাদের কথা হয়তো বা অনেকেই মনে রাখে না! এমনই একজন অবহেলিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ঝিনাইদহের শৈলকুপার শ্যামনগর গ্রামের মৃত জোমারত মণ্ডলের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহাল উদ্দিন মণ্ডল।
১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গাড়াগঞ্জের যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে তারা। যুদ্ধের পর পরাজিত রাজাকারদের দোসর তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হাতুড়ি ও দা দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে তার বাম হাত অকেজো করে দেয়। পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরে এক মুঠো ভাতের সন্ধান চালিয়েছেন দীর্ঘদিন। স্ত্রী ঠেকারী খাতুন, বড় ছেলে রাজু, মেজো ছেলে রেঞ্জু ও ছোট ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী খোকনকে নিয়ে অভাবের সংসারে একজন পঙ্গু ব্যক্তির এছাড়া আর কিই বা করার থাকে?
বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহাল উদ্দিনের বাস্তুভিটা উচ্ছেদ হওয়ায় তারা সপরিবারে ঝাউদিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি কামরাতে কোনোরকমে ঠেলে-গুঁজে জীবনের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সংসারে উপার্জনক্ষম লোক না থাকায় বর্তমানে তাদের খেয়ে না খেয়ে অভাব অনটনের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নিহাল উদ্দিনকে পঙ্গু ভাতা প্রদান ও তার ছোট ছেলে বাক প্রতিবন্ধী খোকনসহ অসহায় পরিবারের সদস্যরা সাহায্যের জন্য সরকারের কাছে বিশেষ আবেদন জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার মনোয়ার হোসেন মালিথা জানান, নিহাল উদ্দিন মণ্ডলকে যুদ্ধের পর হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে তার অনেক অবদান রয়েছে। তার ভিটাবাড়ি উচ্ছেদ হওয়ায় বর্তমানে সপরিবারে তারা ঝাউদিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাস করছেন।