রাসায়নিক সার ও কীটনাশক অপপ্রয়োগ এবং

 

এক সময় আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করা হতো বর্ষপঞ্জির দিনক্ষণ অনুযায়ী। কালক্রমে সে রেওয়াজ বদলেছে। এখন আগাম, ভরা মরসুম ও নাবি ফসল আবাদ করা হয়। তিন সময়ে আবাদের জন্য উপযোগী বীজও প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিশেষ করে সবজি আবাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি পরিষ্কার। প্রয়োজনের তাগিদেই উচ্চফলনশীল বীজের দিকেই ঝুকেছে কৃষককূল। এর সুফল-কুফল নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও ঘুরে ফিরে যে বিষয়টি উঠে আসছে তা হলো- জমির উর্বরতা।

প্রধানমন্ত্রী কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন খামারি, চাষিসহ কৃষি উদ্যোক্তাকে পুরস্কারে ভূষিত করার সময় জমির উর্বরতা ধরে রাখতে রাসায়নিক সারের অপব্যবহার বা জমিতে অপপ্রয়োগ না করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি কীটনাশক প্রয়োগেও নিরুৎসাহিত করেছেন। বলেছেন, কীটনাশকের চেয়ে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষেতের ক্ষতিকর কীট মারতে জমিতে পাখি বসার সুযোগ করে দিতে হবে। এতে উৎপাদিত ফসল শুধু স্বাস্থ্যকরই হবে না, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগের চেয়ে জৈবসার ব্যবহারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। বিদ্যুত অপচয় রোধেও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়।

মানুষ বাড়ছে। কমছে আবাদি জমি। ফলে আবাদে অধিক ফলনের বিকল্প নেই। উচ্চফলনশীল বীজ প্রস্তুতের জন্য গবেষণা হচ্ছে। উচ্চফলনশীল বীজও বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মাঝে কিছু মতলববাজ নিম্নমানের বীজ বিক্রি করে কৃষকদের ঠকাচ্ছে। বীজ দিয়ে কৃষককে ঠকানো মানে জাতিকে ঠকানো। সে কারণেই বীজ নিয়ে প্রতারণা রোধে শক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন। দরকার কৃষকদের সচেতন করতে তৃণমূল পর্যায়ে নানামুখি উদ্যোগ। যদিও কৃষি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষককূলকে সচেতন করে তোলার কর্মসূচি পালন করা হলেও তা যেমন পর্যাপ্ত নয়, তেমনই মাঠপর্যায়ে কর্মরতদের ফাঁকিবাজির বিষয়টিও পরিলক্ষিত হয়। তা না হলে রাসায়নিক সারের মাত্রারিক্ত প্রয়োগ কেন? কেন কীটনাশকের অপপ্রয়োগ? কীটনাশকের মাত্রারিক্ত প্রয়োগে জীববৈচিত্র মুখ থুবড়ে পড়ছে। যার খেসারত সকলকেই দিতে হচ্ছে।

কালের বিবর্তনে বিজ্ঞান বয়ে এনেছে মানবজাতির বহু কল্যাণ। কিছু আবিষ্কার অকল্যাণও যে বয়ে আনেনি তা নয়। এক মরসুমে বাড়তি ফসলের জন্য মাটির উর্বরতা হ্রাস বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে না। রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগে বাড়তি সচেতনতা দরকার। অন্যথায় নিজেদেরই ক্ষতি। জমির উর্বরতা এবং জীববৈচিত্র অক্ষুণ্ণ তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সকলের দায়িত্বশীলতা আগামীদিনগুলোকে উজ্জ্বল করবে।

পুনশ্চ: এই দিনই দিন নয়, আরো দিন আছে। এই দিনেরে নিতে হবে ওই দিনেরই কাছে। অর্থাৎ আজও বাঁচতে হবে, আগামীদিনগুলোও বাঁচার উপযোগী রাখতে হবে।

Leave a comment