গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে কঠোর কর্মসূচি

স্টাফ রিপোর্টার: গ্যাস, বিদ্যুত  ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, গোপনে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে সরকার। কিন্তু যে দিন থেকে গ্যাস, বিদ্যুত  ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হবে তারপর দিন থেকেই আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে। এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরের বালি মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ ভালো নেই, শান্তিতে নেই। সর্বত্র অন্যায়, অনাচার ছড়িয়ে পড়েছে। এ সরকার নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় বসেছে। এখন জনগণের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বোঝাকে সরাতে হবে। এর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ভাগ-বাটোয়ারা করে ক্ষমতায় বসেছে আওয়ামী লীগ। এ সংসদের বিরোধী দলও অবৈধ। বিএনপি ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। আমরা জনগণের ভোটে বিশ্বাসি। তাই ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। বিদেশিরা এ নির্বাচনকে সমর্থন দেয়নি। তাই এরা অবৈধ সরকার।

প্রশাসনে দলীয়করণ: প্রশাসনে দলীয়করণ করা হচ্ছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, এদেশে আজ কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিক নেই। সব প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করছে। সবখানে চলছে দুর্নীতি। সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করা হচ্ছে। ভালো ভালো অফিসারদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। অথবা ওএসডি করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই মিথ্যা অভিযোগ এক সরকারি কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়েছে। নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই সরকার এ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন: নারায়ণগঞ্জে ৭ জন নয় ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, এ খুনের জন্য সরকার ও সরকার দলীয় লোক জড়িত। র‌্যাব দিয়ে তুলে নিয়ে ওদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। কুকর্ম ঢাকতে লাশের সাথে ইট বেঁধে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও আসল খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আসল হোতাকে ধরা হয়নি। তাকে ধরতে সাহসও পায় না।

এ সময় তিনি বলেন, জিয়াকে ধরলে (র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক) বাংলাদেশের গুম-খুনের সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। তার এ পদে থাকার কোনো যোগ্যতাই নেই। তাই অবিলম্বে তাকে অব্যাহতি দিয়ে বিচার করতে হবে।

দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে: সরকারের লুটপাট আর দুর্নীতিতে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনী দিয়ে নানা রকম অপকর্ম করানো হচ্ছে। সব পুলিশ খারাপ নয়। বাংলাদেশের জন্য তাদের অবদান আছে। কিন্তু একটি বিশেষ জেলার পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুণ্ডাপান্ডাদের ঢুকিয়ে পুলিশের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হচ্ছে। বিশেষ জেলার ওই পুলিশ সদস্যরা সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে।

পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলনে, আপনাদের (পুলিশ) বলবো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি চালাবেন না। জনগণের সেবক হিসেবে থাকবেন। শত্রু হিসেবে নয়। আপনাদেরও ছেলেমেয়ে আছে। বিশেষ একটি জেলার পুলিশ নিজেরা অপকর্ম করছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা ইচ্ছে তাই করছে। এমন করলে পাল্টা জবাব দেয়া হবে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই: এখন আর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রীর ১৫টিসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের ৮ হাজার মামলা বাতিল করা হয়েছে। অথচ ঠুকনো অজুহাতে বিএনপে নেতাদের জেলে ঢুকানো হচ্ছে। জজ সাহেবরা আওয়ামী লীগ দেখলেই খালাস দেন। আর বিএনপি-জামায়াত দেখলেই জেলে ভরেন।

বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা আল্লাহকে ভয় করেন, হাসিনাকে না। মিথ্যা বিচার করলে পরকালে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

সুন্দরবনের ঘটনা পরিকল্পিত: সুন্দরবনের ওয়েল ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনা পরিকল্পিত উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, যে ওয়েল ট্যাঙ্কারটি ডুবেছে সেটা ছিলো বালি আনা-নেয়ার করার কার্গো। এর সাথে সরকারের লোকজন জড়িত। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ নেই। সরকার দলীয় লোকদের কোনো বিচার হবে না। সুন্দরবনে এখন আর পশুপাখি থাকবে না, পালিয়ে যাবে। এ ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। এ সরকার শুধু মানুষখেকো নয়, পশুখেকোও। ওরা বাংলাদেশ খেয়ে ফেলতে চায়।