জনসংখ্যার অর্ধেক নারী : এদের পেছনে রেখে সমাজের অগ্রগতি হতে পারে না

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন : ঢাকার আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। পালিত কর্মসূচির মধ্যে ছিলো শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা ও জয়িতাদের মাঝে পদক বিতরণ।

বেগম রোকেয়া দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনসংখ্যার অর্ধেককে পেছনে রেখে সমাজের অগ্রগতি হতে পারে না। সমাজের অগ্রগতির জন্য অবশ্যই নারী ও পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করে বলেন, কোনো মেয়েই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না। প্রতিটি নারী শিক্ষিত হবে। তার সরকার বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস এবং বেগম রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি নারীশিক্ষা বিস্তার এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সমাজে দরিদ্র ও অসহায় নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অধ্যাপক মমতাজ বেগম এবং মিসেস গোলাপ বানুর হাতে বেগম রোকেয়া পদক তুলে দেন। শিশু ও নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়  আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। অনুষ্ঠানে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। এছাড়া বেগম রোকেয়া পদক-২০১৪ বিজয়ী অধ্যাপক মমতাজ বেগম এবং মিসেস গোলাপ বানু তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

চুয়াডাঙ্গায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধপক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পাঁচ নারীকে জেলা পর্যায়ে জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ কার্যক্রমের আওতায় জয়িতা হিসেবে সার্টিফিকেট ও পুরস্কৃত করা হয়।

জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত পাঁচ সফল নারী হলেন- অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য চুয়াডাঙ্গার টার্মিনালপাড়ার সুফিয়া খাতুন লতা, সফল জননী জীবননগর উথলীর হাসেনা বানু, সমাজ উন্নয়নে চুয়াডাঙ্গা গুলশানপাড়ার শাহীন সুলতানা মিলি, নির্যাতনে বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু করা চুয়াডাঙ্গা সিনেমা হলপাড়ার নাজমা আহামেদ মিনু ও শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় চুয়াডাঙ্গা নূরনগরের মেয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী রেজানা খানম বৃষ্টি।

জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম মামুন উজ্জামান ও ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিশোরী মোহন সরকার। বক্তব্য রাখেন- আলমডাঙ্গা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাকসুরা জান্নাত, ব্র্যাক প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর হোসেন, নারীনেত্রী রাশিদা হাসনু আরা, জয়িতা সুফিয়া খাতুন লতা, নাজমা আহমেদ মিনু, শাহীন সুলতানা মিলি ও রেজেনা খানম বৃষ্টি। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন- ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নুঝাত পারভীন। প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন বলেন, দেশের অর্ধেক নারীকে কাজের বাইরে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের নারীদেরকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যারা জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে তাদের সফলতা কামনা করা হয়।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে বেগম রোকেয়া দিবস ও আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন পক্ষ পালিত হয়েছে। মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার ৱ্যালি ও আলোচনাসভা শেষে ৫ জয়িতাকে পুরস্কৃত করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি ৱ্যালি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। ৱ্যালিতে সিভিল সার্জন ডা. ইসমাইল ফারুক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শফিউল আযমসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ৱ্যালি শেষে শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আলোচনাসভা ও জেলার ৫ জয়িতাকে পুরস্কৃত করা হয়। এরা হলেন- পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে খোদেজা খাতুন, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে হাফিজা খাতুন, নির্যাতনের বিভীষিকা প্রতিরোধে গুলশান আরা, সমাজ উন্নয়নে সেলিনা খাতুন ও সফল জননী হিসেবে নিহারুন নেছাকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়াও একই অনুষ্ঠানে মেহেরপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আরো ৫ জয়িতাকে পুরস্কৃত করা হয়।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর গাংনী উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এ দিবস পালন করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাংনী উপজেলা পরিষদের সামনে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রধান অতিথি ছিলেন- এমপি মকবুল হোসেন। বক্তব্য রাখেন গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাছিমা খাতুন, উপজেলা প্রকৌশলী বাছেদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাহ, শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের সহসভাপতি ইয়ছিন রেজা, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আমজাদ হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুজ্জামান শিপু ও সৈনিক লীগর সহসভাপতি জিয়াউল হক জিয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ৫ জয়িতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরা হচ্ছেন- অর্থনীতিতে রওশন আরা, শিক্ষায় হাফিজা খাতুন, নির্যাতন প্রতিরোধে গুলশান আরা, সমাজ উন্নয়নে নুরজাহান বেগম ও সফল জননী নেহারন নেছা।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এ উপলক্ষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মুজিবনগর ও উপজেলা প্রশাসন মুজিবনগর ৱ্যালি ও আলোচনাসভার আয়োজন করে। সকাল সাডে ১০টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৱ্যালিটি উপজেলা চত্বর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুন কুমার মণ্ডল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন- মুজিবনগর ভাইস চেয়ারম্যান জারজিস হোসাইন, সমাজসেবা অফিসার তৌফিকুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন এনজিও প্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ৱ্যালি ও আলোচনাসভায় অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে ৫ জয়িতাকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এরা হচ্ছেন- অর্থনীতিতে সফল বরকতী খাতুন, শিক্ষায় ইয়াসমিন আক্তার, নির্যাতন প্রতিরোধে নাজমা খাতুন, সমাজ উন্নয়নে সাফিয়া শারমিন ও জননী হিসেবে নারগিস খাতুন।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য ৱ্যালি বের হয়। ৱ্যালি শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনাসভা ও জয়িতাদের মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নায়ন, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব সভাপতি এম সাইফুল মা’বুদ, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনএম শাহজালাল, সরকারি কেসি কলেজের অধ্যাপক মহব্বত হোসেন টিপু, সনাক সহসভাপতি আসমা জামান ও সনাক সদস্য খোন্দকার আবু সাইদ। সভাটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির ঝিনাইদহ এরিয়া ম্যানেজার মো. মজিবর রহমান। অনুষ্ঠানে ৫ জয়িতার মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

মহেশপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা পরিষদের হলরুমে আলোচনাসভা ও জয়িতাদের মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছিমা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাও. আব্দুল হাই। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার আবু তালহা, মহেশপুর হাইস্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক এটিএম খাইরুল আনাম, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস, মহেশপুর প্রেসক্লাব সভাপতি আব্দুর রহমান, জয়িতা নির্বাচিত কোহিনুর বেগম। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা বেগম, ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন, ফকির আহম্মদ, জুলফিকার আলী, শাহাজান আলী, আবুল কাশেম সরদার, উপজেলা যুব কর্মকর্তা মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মহিলা সদস্যগণ। সভাশেষে ৫ জন নারীকে জয়িতা হিসেবে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। যারা ক্রেস্ট পেলেন তারা হলেন- চাকরি ক্ষেত্রে রওশনারা বেগম, সফল জননী কোহিনুর বেগম, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সফল মানোয়ারা খাতুন। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন জীবন শুরু করেছেন যে নারী রাশিদা বেগম।