ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ক্যাম্পাসে প্রশাসনের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা

ভর্তিচ্ছুদের হয়রানি ও দর্নীতির আশঙ্কা

 

ইবি প্রতিনিধি: বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথমবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণদের মৌখিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর জন্য নতুন করে মৌখিক সাক্ষাৎকারের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ভর্তি কার্যক্রমে জালিয়াতির আশ্রয় নিতেই কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। এসব শিক্ষকদের আশঙ্কা বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল বন্ধ রেখে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১১ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উত্তীর্ণদের মৌখিক সাক্ষাৎকার শুরু হবে। শেষ হবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। তবে শিক্ষকরা ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর বিরোধিতা করেছেন। এসব শিক্ষকদের অভিযোগ, ক্যাম্পাস বন্ধ রেখে ভর্তি কার্যক্রম চালালে এতে অনেক দুর্নীতি হবে। কম মেধাবীরা ভর্তিতে সুযোগ পেয়ে যাবে। আর এটা হলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হবে। এছাড়া হল বন্ধ থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়বে বলে এসব শিক্ষকদের আশঙ্কা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া পরিষদের সভাপতি আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ রেখে ভর্তি কার্যক্রম চালালে অনেক অসুবিধা আছে। প্রথমত যেসব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে ক্যাম্পাসে আসবে তারা থাকবে কোথায় সেটাও ভাববার বিষয়। মেয়ে ভর্তিচ্ছুদের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া ভর্তি কার্যক্রমেও অনেক অসঙ্গতি থাকতে পারে। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা কোনোক্রমেই ঠিক হবে না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এসব অসুবিধা সত্ত্বেও ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে আমরা ভর্তি কার্যক্রমে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবো না বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি।

প্রসঙ্গত, বিগত সময়ে দেখা গেছে, ভর্তির সাক্ষাৎকার চলাকালে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা মেধায় থাকা কিছু ভর্তিচ্ছুদের আটকে রেখে সিরিয়াল টপকিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভর্তি করিয়েছেন। এছাড়া ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রযোজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ওইসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করারও অভিযোগ রয়েছে। এবার ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে বলে শিক্ষকদের আশঙ্কা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, আমি বলছি না বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে ভর্তি কার্যক্রম চালানো ঠিক হবে না। তবে যেসব বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে তা যেন না ঘটে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি করা উচিত। এছাড়া উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবি জানান তিনি।

ই ইউনিটের সমন্বয়কারী সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভর্তি কার্যক্রম চলাকালে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আনা নেয়ার জন্য সীমিত পরিসরে কিছু বাস দেয়া হবে। তবে হল খোলা রাখা হবে কি-না সে বিষয়ে আগামীকালের (আজ মঙ্গলবার) মিটিঙে সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি জানান।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদিও বন্ধ রয়েছে তারপরও ভর্তি কার্যক্রম চলবে। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিক বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে হল খোলা রাখা যায় কি-না সে ব্যাপারে আগামীকালের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সাক্ষাৎকারের সময়সূচি: ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ ও ১৩ ডিসেম্বর ধর্মতত্ত্ব অনুষদভুক্ত এ, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত সি, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ডি এবং আইন ও শরিয়াহ অনুষদভুক্ত এইচ ইউনিট, ১১ ও ১২ ডিসেম্বর বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ই ইউনিট, ১১, ১৩ ও ১৫ ডিসেম্বর ব্যবসায় অনুসদভুক্ত জি ইউনিট, ১৩ ডিসেম্বর গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগভুক্ত এফ ইউনিট এবং ১১ ও ১৫ ডিসেম্বর কলা অনুষদভুক্ত বি ইউনিটের মৌখিক সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। ১১ ডিসেম্বর এইচ ইউনিটের আইন, ডি ইউনিটের প্রথম শিফট ও কলা অনুষদভুক্ত বি ইউনিটের প্রথম তিন শিফটে মেধা তালিকায় ক্রমানুসারে ১-৪৫ ও ৪র্থ শিফটে মেধা তালিকায় ক্রমানুসারে ১-৩৮ উত্তীর্ণদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। এছাড়া ১৩ ডিসেম্বর এইচ ইউনিটের ফিকাহ ও ডি ইউনিটে দ্বিতীয় শিফটে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ এবং ১৫ ডিসেম্বর কলা অনুষদের বি ইউনিটে ১ম ও ৩য় শিফটে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ ক্রমানুসারে ৪৬-৮৮, ২য় শিফটের ৪৬-৮৯ এবং ৪র্থ শিফটের ৩৯-৭৫ ক্রমানুসারে উত্তীর্ণদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। ভর্তিচ্ছুদের আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। সাক্ষাৎকার সংশ্লিষ্ট ইউনিট সমন্বয়কারীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাক্ষাৎকার শুরু হবে। সাক্ষাৎকারের সময় অবশ্যই ভর্তিচ্ছুদের এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার মূল সনদপত্র, নম্বরপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি সাথে আনতে হবে।