প্রাইভেট পড়ার জন্য নির্জন ঘরে বসবাস : ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর অনেকেরই সন্দেহ ধর্ষণ শেষে হত্যা
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা শহরের আনন্দধামে এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঘর থেকে উদ্ধার করা হলেও রহস্য ফুটে উঠেছে। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের রক্তাক্ত দাগ রয়েছে। অভিভাবকহীন শূন্যবাড়িতে সংঘটিত এ রহস্যজনক মৃত্যু ধামাচাপা দিতে কিছু মতলববাজ উঠে পড়ে লেগেছে। তারা এ মৃত্যুকে জিনের কারসাজি বলে চালানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যে ঘর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেই ঘরের অবস্থা দেখে ও শরীরের রক্তাক্ত চিহ্ন দেখে অনেকেই মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয়েছে বলে দাবি তুলেছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ছত্রপাড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী প্রায় ১ বছর ধরে আলমডাঙ্গায় বসবাস করেন। আলমডাঙ্গা শহরের আনন্দধামের মোটর মেকানিক আব্দুল কাদেরের বাড়ির দু রুম ভাড়া নিয়ে তিনি বসবাস করতেন। তার দু মেয়েকে ভালোভাবে লেখাপড়া শেখানোর উদ্দেশে তিনি শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। গত দু দিন শাহজাহান, ছোট মেয়ে এবং তার স্ত্রী গ্রামে অবস্থান করছিলেন। বড় মেয়ে তাহেরা খাতুন দিনের বেলা একাই থাকতো। রাতে তার সাথে নানি থাকতো। তাহেরা খাতুন আগামী বছর এসএস সি পরীক্ষার্থী ছিলো। প্রাইভেট পড়া কামাই না হয়, সে জন্য সে শহরে একাই ছিলো। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে তাহেরা খাতুনের নানি গিয়ে তাহেরার রুমের দরজা বন্ধ দেখে অনেক ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে নিকটেই বসবাসকারী তাহেরার আরেক খালার বাড়ি গিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে যান। সে সময়ও অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তারা দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর ঢুকে ছাদের ফ্যান লাগানো হুকের সাথে উড়নায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলতে থাকা তাহেরাকে দেখতে পান বলে দাবি করেছেন কয়েকজন। তবে উপস্থিত অনেকেই তাদের দাবি মিথ্যা বলে মন্তব্য করেন। তারা জানান, দরজা ভেতর থেকে আটকানো থাকার বিষয়টি মিথ্যা। নিহত তাহেরার লাশ দেখতে চাইলে প্রতিবেশী অনেক মহিলা বাঁধ সাধেন। তাদের দাবি- তাহেরা ছিলো বেশ ধার্মিক মেয়ে। কারও সামনে যেতো না। পর্দায় থাকতো। এমন মেয়ের লাশের চেহারা দেখাতে তারা কিছুতে রাজি ছিলো না। পরে অনেক পিড়াপিড়িতে রাজি হয়। তাহেরার মুখমণ্ডলে আত্মহত্যার সাধারণ লক্ষণগুলো দেখা যায়নি। তার জিহ্বা বের হয়নি, চোখ, নাক কিংবা কান দিয়ে রক্ত বের হয়নি। মুখমণ্ডল দেখে উপস্থিত কেউই সেটাকে স্বাভাবিক আত্মহত্যা হিসেবে মেনে নিতে পারছিলেন না। তাছাড়া তাহেরার হাতের কব্জির ওপর, পেটের একাধিক স্থানে ও পায়ে ছিলে যাওয়া আঘাতের চিহ্ন ছিলো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যে রুমে তাহেরা থাকতো সে রুমের খাটে সে শাদা রঙের জায়নামাজ বিছিয়ে তাতে বসে পড়াশোনা করেছে। পাশে বই খোলা ছিলো। এক পাশে তার পাজামা দলা করে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অন্যপাশে মোবাইলফোন পড়েছিলো। পড়েছিলো ২০ টাকার মোবাইল রিচার্জের কার্ড। হয়তো আত্মহত্যার পূর্বে সে কারও কাছে ফোন করেছিলো। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে তার রুমেই তো আত্মহত্যা করা যেতো। কেন তা না করে অন্য ঘরে গিয়ে করেছে। রুমের পরিস্থিতি ও তাহেরার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে অনেকের মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে, তাকে জোর করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি তো? জোরাজুরির ফলে হয়তো আঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছে, তাহেরাকে প্রাইভেট পড়াতে আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শিক্ষক রাশেদ যেতো। ঘটনার দিনও দুপুরে পড়িয়ে বেলা ২টার দিকে তিনি চলে যান। তার প্রায় আধঘণ্টা পরেই তাহেরার নানি গিয়ে ডাকাডাকি শুরু করেন। তবে শিক্ষক রাশেদ তা অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় তাহেরাকে পড়ানোর কথা। তবে আত্মহত্যার পূর্বে তাহেরা ফ্লেক্সিলোড দিয়ে যাদের সাথে কথা বলেছিলো তাদের একজন রাশেদ।
প্রতিবেশীদের অনেকের সন্দেহের তীর বাড়ি মালিক কাদেরের ছেলে বাচ্চুর দিকে। সেও বাড়িতে ছিলো। অথচ ঘটনার পর থেকে তাকে আর বাড়িতে দেখতে পাওয়া যায়নি। অনেকেই দাবি করেছেন, ওই বিল্ডিঙে ভাড়ায় বসবাস করেন আরেক পরিবার। আব্দুল হক পরিবার। তিনি পল্লী বিদ্যুত অফিসে চাকরি করেন। তার স্ত্রী ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন। তিনি হয়তো অনেক কিছুই জানেন। তিনি মুখ খুললে এ রহস্য অনেক ফিকে হবে। উপস্থিত অনেকেই এ রহস্যজনক আত্মহত্যাকে জিনের কারসাজি বলে চালানোর অপচেষ্টা করে যাচ্ছিলো। তবে কয়েকজন যুবক সে অপচেষ্টাকারী মতলববাজদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় থানা পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পুলিশের নিকট আত্মহত্যার বিষয়ে সন্দেহ হলে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায়।