ছিটমহলগুলোর বাসিন্দারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য আশপাশের বাজারে যেতে পারে না, কাজকর্মের জন্য কোথাও যেতে পারে না, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারে না, জরুরি প্রয়োজনে কোনো রোগীকে নিয়ে হাসপাতালেও যেতে পারে না। দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য বেরোনোর সুযোগ পায় তারা, তাও বন্ধ থাকে কখনো কখনো। চরম এই অমানবিক জীবনযাপনের অবসান হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের রয়েছে ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতে রয়েছে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পর ছিটমহলবাসী আশায় বুক বাধলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ৭৭ বছর ধরে ছিটমহলগুলোর অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বংশপরম্পরায় যেনো অঘোষিত জেলখানায় বন্দি। এই দীর্ঘ সময় ধরে জেলখানার কয়েদিদের চেয়েও অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছে তারা।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় আশা করা হয়েছিলো সেই চুক্তি আবার বাস্তব রূপ পাবে; কিন্তু বেঁকে বসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। সে সময় কংগ্রেস সরকার এ উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবার চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়েছেন। পার্লামেন্টে তার দল বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও রয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তিটি পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটির অনুমোদনও পেয়েছে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও সুর বদল করে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে আশা করা যায়, শিগগিরই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে। এ খবরে ছিটমহলগুলোতে আবার যেন প্রাণের স্পন্দন দেখা দিয়েছে। মমতার ঘোষণার পর পরই অনেকে সেখানে আনন্দ মিছিলও করেছে। ছিটমহল ছাড়াও দু দেশের মধ্যে প্রায় তিন হাজার একর করে অপদখলীয় জমি রয়েছে। এসব জমি নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে থাকে। স্থলসীমান্ত চুক্তিতে এ সমস্যারও সমাধান হবে। সমস্যা যতো জটিলই হোক, তা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান অসম্ভব নয়। সমস্যা যতো কমবে দু দেশের সুপ্রতিবেশী সুলভ সম্পর্কও ততো বাড়বে।
ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি চলতি মাসেই ভারত সফরে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে শিগগিরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন। সেই সফরের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখার প্রত্যাশায়।