শুরু হলো আখমাড়াই মরসুম : অর্জিত হোক লক্ষ্যমাত্রা

শুরু হয়েছে আখমাড়াই মরসুম। এশিয়ার এক সময়ের সর্ববৃহৎ চিনিকল চুয়াডাঙ্গা দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এবং ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের মাড়াই মরসুম গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি। উদ্বোধনের সময় শিল্পমন্ত্রী শিল্প সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

উদ্বোধনের পূর্বে এবারও বিগত মাড়াই মরসুমের মতোই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অবাক হলেও সত্য যে, মাড়াই মরসুম শুরু হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে উৎপাদিত চিনি এখনও অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মোবারকগঞ্জ চিনিকল ও কেরুজ চিনিকলে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকা চিনির মূল্য শত কোটি টাকা। চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকার পাশাপাশি নানা কারণেই লোকসানের বোঝা বেড়েই চলেছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, প্রতিবছর উৎপাদিত চিনি যথাসময়ে বিক্রির বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন? চিনি বিক্রির সময়োপযোগী উদ্যোগ যথাযথ হলে তথা বাস্তবসম্মত হলে নিশ্চয় টন টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে থাকতো না। সে কারণেই মাঠপর্যায়ের আলোচনায় নীতি নির্ধারকদের অদূরদর্শিতা বড্ড প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, ২০১৪-১৫ আখমাড়াই মরসুমে কার্যদিবস ধরা হয়েছে ১২০। মোবারকগঞ্জ চিনিকলে বর্তমানে গত তিন বছরের উৎপাদিত ১৩ হাজার ৩শ মেট্রিক টন চিনি মজুদ রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৫২ কোটি টাকা। এদিকে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন, পরপর ৪ মাড়াই মরসুমের উৎপাদিত ১৩ হাজার ৯শ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় গোডাউনে রয়েছে। মিলের ৫টি গোডাউন চিনিতে কানায় কানায় ভর্তি থাকায় বিকল্প গোডাউনের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কেরুজ গোডাউনে পড়ে থাকা চিনির মূল্য অর্ধশত কোটি টাকা। তবে চিনির বাজার দাম ৪০ টাকা থেকে নেমে এখন ৩৭ টাকা নির্ধারণ করায় টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রেই প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক, তাহলে মূল্য যখন হ্রাস করাই হলো, তখন বিলম্বে কেন?

বাজারে দেশের বিভিন্ন চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত চিনির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা চিনিও বিক্রি হচ্ছে। বাজার প্রতিযোগিতায় দেশের চিনিকলের উৎপাদিত চিনি পিছিয়ে পড়ছে বলেই অবিক্রি থেকে যাচ্ছে। দেশে উৎপাদিত চিনি পড়ে থাকার কারণে যখন চিনিকলগুলোই হুমকির মুখে পড়ছে তখনও কেন বিদেশ থেকে চিনি আমদানির অনুমোদন? বেশ কয়েক বছর আগে চিনির বাজার অস্থির ছিলো। তর তর করে মূল্য বাড়িয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা কামিয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকা। বিদেশ থেকে আমদানি করে সে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। সামাল দিলেও দেশের চিনিকলগুলোকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার আড়ালে কি বিদেশি চক্রান্ত? নাকি নীতি নির্ধারকদের অদূরদর্শিতাই দায়ী? যেটাই হোক, কোনোটিই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়, সেহেতু সমস্যা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তাছাড়া আখ আবাদে কৃষকদের আগ্রহ ধরে রাখতে বা উৎসাহিত করতে অবশ্যই আখের মূল্য বৃদ্ধির কথা ভাবতে হবে। আখ না থাকলে চিনিকল বাঁচবে কীভাবে?

কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষকে এবার ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আখমাড়াই করে ৯০ কার্য দিবসে ৮ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। মোবারকগঞ্জ চিনিকলে এ বছর ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন আখড়াই করে ৯ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মিল দুটির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হোক।