শাবাশ! চুয়াডাঙ্গার উচ্চ মাধ্যমিক-২০১৪ ব্যাচ

বুয়েটসহ দেশের ৫টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধেও সাফল্য

 

আব্দুস সালাম: বুয়েটসহ দেশের ৫টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধেও চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষার্থীরা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে সকলকে চমকে দিয়েছে। বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট ও বুটেক্সে ভর্তিযুদ্ধে মেধার ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে ১১ জন। সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে ১৫ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে ভর্তিযুদ্ধেও চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা শক্ত অবস্থান দখল করেছে। এরপর যারা নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার লিখতে পারবে বা ইঞ্জনিয়ার উপাধিতে ভূষিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে তাদের ভর্তিযুদ্ধেও চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছে। চুয়াডাঙ্গার শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে জাগিয়েছে আশার আলো।

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। মেধার ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে ৬ জন। কুয়েট, রুয়েট, চুয়েট ও বুটেক্সে মেধার ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে ৬ জন। গত তিন বছরের তালিকা বিশ্লেষণে এবার বুয়েটে যারা সুবিধাজনক তালিকায় রয়েছে তাদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ জন এবং অন্য ৪টি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলেসহ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রমন্বয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদে মেধার ভিত্তিতে এবার ১১ জন সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে। মেডিকেল কলেজগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে ১৭ জন। এর মধ্যে কয়েকজন পুরাতন ব্যাচের থাকলেও চুয়াডাঙ্গার উচ্চ মাধ্যমিক’১৪ ব্যাচ ভর্তিযুদ্ধে সর্বক্ষেত্রেই সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। এটাকে শিক্ষার মান বৃদ্ধিরই সাক্ষ্য বলে মন্তব্য অনেকের। এ অবদান অবশ্যই চুয়াডাঙ্গার সকল শিক্ষকের। স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের অনেকেই এ মন্তব্য করে বলেছেন, শিক্ষার মান ধরে রাখতে শিক্ষকরা আন্তরিক হলে চুয়াডাঙ্গার মুখ আরো উজ্জ্বল হবে। সেই প্রত্যাশা আমাদের।

জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ৯৪৫ আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে মেধা তালিকায় যারা ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে আলমডাঙ্গা গড়চাপড়ার মিজানুর রহমান ও রুনা লায়লার ছেলে আব্দুল্লাহ-আল-মামুন। মেধা তালিকায় তার অবস্থান ১৬৯। মামুন কুয়েট ও রুয়েটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। একই উপজেলার রংপুরের মজনু এলাহি ও বিলকিস বানুর ছেলে সজিবুল ইসলাম সজিব বুয়েটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। মেধা তালিকায় তার অবস্থান ২৬১। চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালপাড়ার মোয়াজ্জেম হোসেন ও হাসিনুন নাহার পুষ্প’র ছেলে মুন্তাসির মুনেম প্রান্ত বুয়েটে ভর্তি যোগ্যতা অর্জন করেছে। মেধা তালিকায় তার অবস্থান ৩৯৭। প্রান্ত কুয়েটেও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে। এছাড়াও বুয়েটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে আলমডাঙ্গা গড়চাপড়ার আসাদুজ্জামান ও ইসমত আরার ছেলে নোমান মোস্তফা। মেধা তালিকায় তার অবস্থান ৭৬৮।

বুয়েটে যারা সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে তারা হলো দামুড়হুদা দর্শনা মোবারকপাড়ার আব্দুল কাইয়্যুম ও নাজনীন সুলতানার ছেলে আলী হাসান সিফাত এবং চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার আজগার আলী মণ্ডল ও মাহমুদা খাতুনের ছেলে ওয়াসিফ মাহমুদ রাফিদ। সিফাত কুয়েট ও রুয়েটে মেধা তালিকায় ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। রাফিদ চুয়েটে মেধা তালিকায় ও কুয়েটে সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে। অপরদিকে ৫৫ আসনের বিপরীতে আর্কিটেকচারে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে চুয়াডাঙ্গা সিঅ্যান্ডবিপাড়র সিরাজুল ইসলাম ও জাহিদা সুলতানার মেয়ে ফাতেমা জান্নাত কেয়া। কেয়া রুয়েটেও আর্কিটেকচারে সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ভর্তির পরীক্ষায় ৬৪০ আসনের বিপরীতে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে দামুড়হুদা দর্শনা থানাপাড়ার রবিউল কবির পল্লব ও সোনিয়া কবির নিলীমার ছেলে ফকরুল-বিন কবির পবন। পবন কুয়েটেও সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। যারা চুয়েটে সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে তারা হলো চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহের মৃত নূর আলী চেয়ারম্যান ও আসমা বেগমের ছেলে ওহিদুজ্জামান সজিব, চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারপাড়ার এমদাদুল হক মালিক ডডি ও ইয়াসমিন আক্তারের ছেলে এজাজুল হক মালিক সিয়াম, আলমডাঙ্গা জেহালা বাজারের জিল্লুর রহমান ও রোকেয়া খাতুনের ছেলে সাইনুর রহমান রাহুল এবং চুয়াডাঙ্গা পুরাতন হাসপাতালপাড়ার অ্যাড. আব্দুস সালাম ও অনামিকা সুলতানার ছেলে আব্দুস সাইম ছোটন। সিয়াম রুয়েট ও কুয়েটেও সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইঞ্জিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ভর্তি পরীক্ষায় ৪৪০ আসনের বিপরীতে সরাসরি মেধা তালিকায় অবস্থান করে নিয়েছে চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড় স্কুলপাড়ার অ্যাড. বেলাল হোসেন ও তাসফুন্নাহারের ছেলে আবীর হাসান প্রিন্স। সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় আছে চুয়াডাঙ্গা সিনেমাহল পাড়ার ইমাম হোসেন ও হেলেনা পারভীনের ছেলে আজিমুল ইসলাম আজিম, মুক্তিপাড়ার সাইদুর রহমান ও কামরুন্নেছা মায়ার মেয়ে সুমাইয়া রহমান এবং ছোটশলুয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম ও লতিফা বেগমের ছেলে নাজমুল ইসলাম।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় ৮১৫ আসেনের বিপরীতে সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় থেকে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে চুয়াডাঙ্গা বেলাগাছি স্কুলপাড়ার আবু তালেব জোয়ার্দ্দার ও সাহারবানু বেগমের ছেলে কারিমুল জোয়ার্দ্দার। কারিমুল রুয়েটেও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার মুনির উদ্দীন জোয়ার্দ্দার ও রঞ্জু আরা জোয়ার্দ্দারের দু ছেলে উচ্ছ্বাস ও উল্লাস সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে। উচ্ছ্বাস ও উল্লাস রুয়েটেও অপেক্ষমাণ তালিকায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ঈদগাপাড়ার কারিমুল ইসলাম ও কহিনুর বেগমের ছেলে সানি মেরাজ জিহান, বড়বাজার পাড়ার আব্দুর রহিম ও শাহনাজ আক্তারের মেয়ে ফারহানা আফরিন লাম, কলেজপাড়ার রুহুল আমীন ও দিলা পারভীনের ছেলে তানভীর মুকিত এবং ঈদগাপাড়ার সালাহ উদ্দিন জোয়ার্দ্দার ও দিলারা পারভীনের মেয়ে সাদিয়া আক্তার তিলা কুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে। জিহান, তানভীর ও তিলা এ তিনজন রুয়েটও সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। লাম রুয়েট ও বুটেক্সে সুবধাজনক অবস্থানে থেকে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় সুবিধাজনক অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে চুয়াডাঙ্গা সিনেমা হলপাড়ার ডা. কামরুদ্দীন ও ডা. রোকেয়া খাতুনের মেয়ে জেসমিন নাহার জুঁই।

এদিকে ক্যাডেট কলেজের দু শিক্ষার্থী আলমডাঙ্গা ভোগাইলবগাদি গ্রামের সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস ও গুলশান নাহারের মেয়ে সোহরীয়া আফরিন স্বর্ণ এবং জীবননগর চাকলা গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও রেহেনা আক্তারের ছেলে মাসুদ পারভেজ রমি বুয়েটে মেধা তালিকায় ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। মেধা তালিকায় এদের অবস্থান যথাক্রমে ৬২৫ ও ৬৩৮।