আশিক পারভেজ: ভেজাল বীজের কারণে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গার কপি চাষিরা। এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ ও জমি ভাগেবর্গা নিয়ে কপির আবাদ করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তারা। বিশেষ করে ফুলকপি চাষিরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে এলাকার কৃষকরা জানান। এরপরও ভেজাল বীজ সরবরাহকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না কৃষকরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হানুরবাড়াদি, গাড়াবাড়িয়া, মাখালডাঙ্গা, দীননাথপুর, কুকিয়া চাঁদপুর, বেলগাছি, হায়দারপুরসহ আশপাশ কয়েকটি গ্রামের মাঠ সবজির মাঠ হিসেবে পরিচিত। এখানকার কৃষকরা সবজি আবাদের উপরেই বেশি জোর দিয়ে থাকেন। ঢাকার বাজারে এখানকার সবজির বিশেষ কদর রয়েছে। পাইকাররা এখান থেকে ট্রাক ট্রাক সবজি ঢাকায় নিয়ে যান। কিন্তু এ বছর কপি চাষ করে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা। কারো কারো হাত পড়েছে মাথায়। এ অবস্থায় কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা। গাড়াবাড়িয়ার কাগমারী মাঠে গেলে গ্রামের কৃষক চান্দু মিয়া জানান, তিনি ব্র্যাক এনজিও থেকে ১২ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফুলকপির আবাদ করেছেন। কিন্তু কপির চারা রোপণের মাত্র ২০ দিনের মাথায় ফুল এসেছে। স্বাভাবিক নিয়মে দু মাস ১০ দিন পর ফুল আসার কথা। এ কারণে কপি বড় হচ্ছে না। একেকটি ফুলকপির ওজন ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত ওজন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে মাত্র কয়েকশ’ গ্রাম পর্যন্ত। কৃষক চান্দু জানান, তিনি গাড়াবাড়িয়ার সার ও বীজ ব্যবসায়ী মাহবুব রহমান লাল্টুর কাছ থেকে সাড়ে ৫শ টাকায় দিয়ে ১০ গ্রাম ফুলকপির বীজ কেনেন। হোয়াইট লিডার নামক এই বীজে সবচেয়ে বেশি ফলন হবে বলে বীজ বিক্রেতা বলেছিলেন। কপির ভালো ফলন হলে তার ১২ কাঠা জমির কপিতে ২৫ হাজার টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সারা ভূঁই কুড়িয়ে ২ হাজার টাকাও ভজবে না। গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের, হাফিজুর, বাদল, বিশারত ও আরিফেরও একই অভিযোগ। তারা ভেজাল বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন। বীজ বিক্রেতা লাল্টুর কাছে এর ক্ষতিপূরণ চান ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত কপি চাষিরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, ক্ষেতের গাছ ভালো দেখা গেলেও এতে কোনো ফলন নেই। আমরা ঋণ নিয়ে এবং জমি লিজ নিয়ে কপির আবাদ করেছিলাম। এখন কী করে ঋণ শোধ দেব?
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, অধিক মুনাফার লোভে স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ী মাহবুব রহমান লাল্টু কপির ভেজাল বীজ নকল প্যাকেটে ভরে চাষিদের কাছে বিক্রি করেছেন। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত লাল্টুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত লাল্টুর সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, যে বীজ চাষিদের দেয়া হয়েছে, তার নাম কাশেম সিড। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নামে চুয়াডাঙ্গায় কোনো বীজ বা তার ডিলার নেই।