মারণনেশার কবলে পড়ে ধ্বংস হচ্ছে জাতির ভবিষ্যত

 

মাদকের করালগ্রাসে যুবসমাজ শুধু ধ্বংসই হচ্ছে না, বহু পেশাজীবী পেশা হারিয়ে অপরাধ জগতে পা বাড়াচ্ছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও মাদক তাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামিয়েছে। পিতা-মাতার খুনিও হচ্ছে কেউ কেউ। এর মধ্যে পুলিশ অফিসার হয়েও তার মেয়েকে মাদকমুক্ত রাখতে না পেরে সস্ত্রীক নৃশংস খুনের শিকার হয়েছেন। এ থেকেও কি শিক্ষা নেয়া উচিত নয়? সমাজ মাদকমুক্ত করতে হলে অবশ্যই নানামুখি উদ্যোগ দরকার। যদিও মাদকচক্রের হাত অনেক লম্বা। দায়িত্বশীলদের কারো কারো বাড়তি সুবিধা দিয়ে সমাজে মাদক ছড়িয়ে জাতির ভবিষ্যত ভয়াবহ শঙ্কার মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অবশ্যই মারণনেশা সমাজে একদিনে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়নি। নেয় না। দীর্ঘদিনের উদাসীনতার কারণেই এমনটি হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ভারত সীমান্তবর্তী জেলা। মারণনেশাগুলোর অধিকাংশই ভারত থেকে পাচার করে আনা হয়। এক শ্রেণির চোরাচালানীচক্র মারণনেশা হেরোইন, মরফিন, ফেনসিডিল পাচার করে এনে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দিচ্ছে। মারণনেশা দ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি বয়সী থেকে মধ্যবয়সীরাও মাদকের কবলে পড়ে শুধু হাবুডুবুই খাচ্ছে না, নিশ্চিত পতনের পাতালে ধাবিত হচ্ছে। মাদকের কবলে পড়ে মেধাবী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। অকালে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। মাদকের কারণেই সমাজে ছোট-বড় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহু সাজানো সংসার তছনছ হচ্ছে। এরপরও মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত রূপ নিচ্ছে না বা পাচ্ছে না?

নেশাগ্রস্তকে সুস্থ করতে বহু মাতা-পিতা তাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানকে স্বেচ্ছায় পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। অনেকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র খুলেও অর্থ আদায়ের ফাঁদ পাতছে। ক’দিন আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তির ১২ দিনের মাথায় মারা গেছে। মৃত্যুর আড়ালে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করলেও অজ্ঞাত কারণে মৃত ব্যক্তির পরিবারের তরফে তেমন কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। উল্টো তড়িঘড়ি করে দাফন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। পুলিশেরও তেমন কোনো পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয়নি। মাদক নিরাময় কেন্দ্র খুলে চিকিৎসার নামে সেখানে কি হচ্ছে? স্বাস্থ্য বিভাগ কি অনুমোদন দিয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাব নেয়ারও তেমন উদ্যোগ কি স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়েছে?

মাদক আগুনের ফুলকির মতোই উড়ে অন্যের ঘর পোড়ায়। প্রতিবেশীর ছেলে বা মেয়ে মাদকে হাবুডুবু খাচ্ছে, নিশ্চিত অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেখে কোনোভাবেই তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কারণ নেই। নিজের সন্তানও যে মাদকের কবলে পড়ে সংসারে আগুন ধরাবে না, তা নিশ্চিত হওয়ার কি কোনো সুযোগ আছে? অবশ্যই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে ঢেলে সাজানো দরকার। পুলিশেরও মাদক উচ্ছেদে আন্তরিকতা প্রয়োজন। মাদক পাচাররোধে সীমান্ত প্রহরীদের পাশাপাশি সীমান্তবাসীদেরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। সমাজের সচেতনমহলকে মারণনেশাবিরোধী গণজাগরণ সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। অভিভাবকদেরকেও সন্তানদের প্রতি বাড়তি দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়া জরুরি।