বখাটে মানিকের হেঁসোর কোপে কৃষক লিটন খুন : ঘাতকের গাঢাকা

দামুড়হুদার কানাইডাঙ্গা গ্রামের মাঠে খড়ি কোড়ানোকে কেন্দ্র করে দু যুবকের তর্কবিতর্ক

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদা কানাইডাঙ্গার যুবক কৃষক লিটনকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। একই গ্রামের বখাটে মানিক ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে তাকে। ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশের ভয়ে সপরিবারে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপন করেছে মানিক। এ ব্যাপারে দামুড়হুদা থানায় মামলা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লিটনের লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ছিলো।

DSC05241

গ্রামসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কানাইডাঙ্গা পূর্বপাড়ার কলিম উদ্দিন ওরফে কলমের বড় ছেলে লিটন (২৫) গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খড়ি কোড়াতে যায় কুনিয়ার মাঠে। সেখানে জামাল বিশ্বাসের পেঁপে বাগানে পড়ে থাকা পেঁপেগাছ কাটে সে। কর্তনকৃত পেঁপে গাছ নিজের বলে দাবি করে লিটন ও মানিক। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে লিটন গ্রামের দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বখাটে যুবক মানিক পেছন দিক থেকে ধারালো হেঁসো নিয়ে হামলে পড়ে লিটনের ওপর। সে হেঁসো দিয়ে লিটনের পিঠে কোপ বসিয়ে দেয়। এতে হেঁসো ঢুকে যায় প্রায় এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে। মাঠের লোকজন ছুটে এসে লিটনকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। কিন্তু লিটনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পরমর্শ দেন চিকিৎসক। মুমূর্ষু অবস্থায় লিটনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটনের অবস্থা দেখে সাময়িক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। রাজশাহী নেয়ার প্রস্তুতিকালে গতকাল বেলা ৩টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই মারা যায় লিটন।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, কানাইডাঙ্গার মসজিদের ইমাম আবু হানিফার ছেলে মানিক (২০) এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তার বাবা তাকে মাদরাসায় পড়তে দিলে সে সেখানে না পড়ে বিভিন্নভাবে বখাটেদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার খুনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় উঠে আসে মানিক।

গ্রামের কলিম উদ্দিনের ছেলে নিহত লিটন বছর চারেক আগে বিয়ে করে পার্শ্ববর্তী মুন্সিপুরের আমির হোসেনের মেয়ে মৌসুমীর সাথে। সংসার জীবনে রয়েছে তাদের এক পুত্রসন্তান। নাম মিরাজ। বয়স আড়াই বছর। মিরাজ এখনো জানে না সে চিরতরে হারিয়েছে তার বাবাকে। স্ত্রী মৌসুমী কাঁদতে কাঁদতে বারবারই মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এসব দৃশ্য দেখে কানাইডাঙ্গা গ্রামের অনেকেই ধরে রাখতে পারেননি চোখের অশ্রু।

গ্রামবাসী জানায়, লিটন হত্যার পর বিষয়টি জানাজানি হলে, ঘাতক মানিক গা ঢাকা দেয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকের পরিবারের সবাই বাড়ি ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছে। এদিকে গতকাল বুধবারই নিহত লিটনের পিতা কলিম উদ্দিন বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লিটনের লাশ সুরোতহাল রিপোর্ট করেন দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই এমদাদ হোসেন। পরে লাশ গতরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। আজ বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে লিটনের লাশ নিজগ্রাম কানাইডাঙ্গায় দাফন সম্পন্ন হবে বলে তার পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে।