কয়েক হাজার শালিক পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত গ্রাম

দামুড়হুদার একটি বাঁশঝাড়ে কয়েক হাজার শালিক পাখির বসবাস

 

তাছির আহমেদ: কয়েক যুগ ধরে হাজার হাজার শালিক পাখি বসবাস করছে দামুড়হুদার কেশবপুর স্কুলের সন্নিকটের একটি বাঁশঝাড়ে। প্রাকৃতিকভাবেই প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে এরা বসবাস করে আসছে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল আর সন্ধ্যায় চলে এ সকল পাখির কিচিরমিচির। এ স্কুলের পূর্বপাশের এক বৃহদাকার বাঁশবাগানে প্রতিদিন বিকেল থেকেই এরা অবস্থান নিতে শুরু করে। তারপর করে সমস্বরে বিশাল শব্দের কলকলানি, তাতে হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম মুখরিত। সন্ধ্যার পর এলাকার মানুষের কোলাহল থেমে গেলে তখন এরা হয় নিস্তব্ধ। আবার কিচিরমিচির শুরু করে ফজরের আজান তাদের কানে গেলে। ভোরের আবছা আলোই এরা এ বাঁশঝাড় থেকে বেরিয়ে সামনের দিগন্ত জোড় মাঠের বিদ্যুতের তাঁরে বসে অপেক্ষা করে সূর্যের আলোর জন্য। তারপর একে একে ফুরফুর করে এদিক ওদিক উড়ে যায় যে যার মতো খাবারের খোঁজে। নিত্যদিনের এ ঘটনা এখানে কয়েক যুগ ধরে ঘটায় এ সকল পাখিদের গ্রামবাসীরা ভালোবাসে। এ কারণে পাখিগুলো এ স্থানটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভেবে এখানেই যুগযুগ ধরে বসবাস করছে।

এ গ্রামের ইউনুচ আলী, আবুল হোসেন খাঁ, রহম আলী, মকছেদ আলী, ওয়াজেদ মাস্টার, আবুল হোসেন মণ্ডল ও তাজুল ইসলামের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, আমাদের অতি পরিচিত চেনা-জানা পাখির মধ্যে এখনো টিকে আছে অগণিত শালিক পাখি। পাখি পরিবেশ বান্ধব তবে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার কারণে এদের সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। শালিকেরা জনবসতির আশপাশে থাকতে পছন্দ করে। এদের বিভিন্ন প্রজাতি এখন আর নজরে পড়ে না। তবে গাঙ শালিক আর গোবরে শালিক প্রতিদিন কয়েক হাজার এই বাঁশঝাড়ে রাত যাপন করে। ছোট আকৃতির এ পাখি নিরীহ ও শান্ত স্বভাবের। এরা ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে কৃষিপণ্যকে সহায়তা করে। তবে ইদানিং ফসলের জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় এ শালিক পাখির সংখ্যাও দিনদিন কমে যাচ্ছে।

দামুড়হুদার আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দিন বলেন- শালিক পাখি কয়েক প্রজাতির আছে। যেমন- ঝুঁটি শালিক, বামন শালিক, চিতা শালিক, গাঙ শালিক, ভাত শালিক, ময়না শালিক। এতদাঞ্চলে মূলত দু প্রজাতির ভাত শালিক ও গোবরে শালিক এখনো সর্বত্রই দেখা যায়। ভাত শালিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে বলে এরা বিরূপ অবস্থাতেও টিকে আছে। এরা মানুষের বসতবাড়ির আশপাশে থেকে মানুষের আহার্য ভাত, তরকারি, চাল, চিড়া, মুড়ি চুরি করে খেতে অভ্যস্ত। এদের ঠোঁট ছোট এবং দু চোখের পাশে লম্বা টানা হলুদ রং। লেজের নিচের অংশের পালক শাদা আর ওপরে কালচে। এদের ঠোঁট থেকে গলা পর্যন্ত পালকের রং কালো, পায়ের রং হালকা হলুদ। আর দেখা যায় গোবরে শালিককে। কেউ কেউ গাঙ শালিকও বলে। এদের ঠোঁট লম্বা এবং হলুদ। এদের চোখের দু পাশ ও দু ডানায় লম্বা রেখার মতো শাদা পালক এদের আকর্ষণীয় করে তোলে। এদের বুকের পালক শাদা, লেজটা কালো রঙের। গলা পিঠ ও মাথার পালকের রং কালো। এরা মূলত পোকামাকড় খেতে বেশি ভালোবাসে। গোবরে শালিক নামকরণের অন্যতম কারণ হচ্ছে এরা পশুর গোবর খুঁটে খুঁটে পোকামাকড় খুঁজে খাওয়াতে।