আদালত অবমাননার দায়ে সাংবাদিক বার্গম্যানের দণ্ড

 

স্টাফ রিপোর্টার: আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটেনের নাগরিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। অনাদায়ে তাকে সাত দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একই সাথে তাকে এদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত এজলাস কক্ষে বসে থাকারও দণ্ড দেয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে বলেন, ডেভিড বার্গম্যানকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে এবং ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতে হবে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিস বরাবর চালানের মাধ্যমে এ টাকা জমা দিতে হবে। অনাদায়ে তাকে সাত দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে উল্লেখ করেন।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত বিষয়ে ভবিষ্যতে সমালোচনামূলক লেখা না লিখতে বার্গম্যানকে সতর্ক করে দিয়েছেন। ডেভিড বার্গম্যান ইংরেজি দৈনিক নিউ এজের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে আইনজীবী সারা হোসেনের স্বামী। রায় ঘোষণার সময় সারা হোসেনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে একজন যা খুশি তাই করতে পারে না। যদি তার কার্যক্রম জনস্বার্থ বা পুরো জাতিকে আক্রান্ত করে তবে তাকে সরল বিশ্বাসে করেছে বলা যাবে না। তা ছাড়া স্থানীয় একটি জাতীয় পত্রিকায় ভুল ও অমর্যাদাকর প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য বার্গম্যান ইতঃপূর্বে আরও একটি আদালত অবমাননার অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন।
সেখানে ট্রাইব্যুনাল-১ তাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন। তারপরও বার্গম্যান তার লেখার সমালোচনায় বিচারিক প্রক্রিয়া এবং ট্রাইব্যুনালের কর্তৃত্বকে অপবাদ দিয়েছেন। একাত্তরের মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে যে কুৎসা রটিয়েছেন তার জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু এটা সর্বোচ্চ আত্মতুষ্টিমূলক আচরণের মাধ্যমে করা হয়েছে। যার কারণে আমরা সেটা ক্ষমা বিবেচনার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি।

দীর্ঘ রায়ে বার্গম্যানের সমালোচনা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য লেখার ক্ষেত্রে সতর্ক করে দিয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, তিনি কোনো আইনজীবী নন, শিক্ষকও নন, গবেষকও নন অথবা তিনি এমন কোনো ব্যক্তি নন যার ভিত্তিতে তিনি এ সমালোচনা করেছেন। তিনি একজন সাংবাদিক, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে জনসম্মুখে প্রকাশ করেন। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে ট্রাইব্যুনালের কর্তৃত্ব নিয়ে এবং বিচারিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে সমালোচনা করা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। ব্লগে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ লেখার মাধ্যমে বার্গম্যান বিচারাধীন বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং ট্রাইব্যুনালকেই ‘বিতর্কিত’ করার চেষ্টা করেছেন বলেও রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।

ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায় মোট ৪২ পৃষ্ঠার। বেলা ১১টার পরপরই ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়া শুরু করেন। রায় প্রদানের মাঝামাঝি সময়ে ট্রাইব্যুনাল তাকে দাঁড়াতে বলেন। রায় প্রদান শেষে তাকে আবার কাঠগড়ার চেয়ারে বসতে বলেন। সময় সব মিলিয়ে প্রায় ১৫-১৬ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন ডেভিড বার্গম্যান। রায় পাঠ করার পরে ট্রাইব্যুনাল তাকে আসামির কাঠগড়ার চেয়ারে বসতে বললেও তিনি গিয়ে ট্রাইব্যুনালের সোফাতে বসেন। বেলা ১১টা থেকে রায় প্রদান ও অপর একটি মামলার শুনানি শেষ হওয়া পর্যন্ত সর্বমোট প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টার মতো বার্গম্যান ট্রাইব্যুনালে ছিলেন।

রায়ের পর বার্গম্যানের স্ত্রী ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা মনে করি, ট্রাইব্যুনালের এ রায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর একটি চরম আঘাত। তার কারণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার অধিকার। সেখানে এ রায় দিয়ে ভিন্নমত প্রকাশের অধিকারকে রুদ্ধ করা হয়েছে। বার্গম্যানের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, রায়ের অনুলিপি পেলে তারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। এর কারণ ট্রাইব্যুনালের আইনে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগকারী আবুল কালাম আজাদের আইনজীবী মিজান সাঈদ বলেন, এ রায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান তার লেখার মধ্য দিয়ে আদালতের অবমাননা করেছেন।

Leave a comment