ফুলকপি বিক্রি করে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে : ঝালমুড়ি খেয়ে চোখ ঢুলুঢুলু
বখতিয়ার হোসেন বকুল: অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে আহত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে দামুড়হুদার কাদিপুর গাঙপাড়ার ফুলকপি চাষি জিয়া, মুনছুর ও খোকন। মারধর খেয়ে আহত হয়ে বাড়ি ফিরলেও তাদের এখনও ঘোর কাটেনি। এখনও মাঝে মধ্যে ভুল বকছে। মুখের কথাও অনেকটা অস্পষ্ট। আহতদের মধ্যে জিয়াউরের শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। আহত ৩ জনই বর্তমানে নিজ নিজ বাড়িতে আছে। গত শনিবার সকালে ঢাকা সাভার বাজারে ফুলকপি বিক্রি করে কোহিনুর পরিবহনযোগে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের কাদিপুর গাঙপাড়ার ফুলকপি চাষি মৃত মজনুর রহমানের ছেলে জিয়াউর রহমান (৩৫) একই গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে মুনছুর আলী (৩৬) ও আব্দুর রহিমের ছেলে খোকন (২৮) গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাকে ফুলকপি নিয়ে ডাকায় যায়। শনিবার সকালে ঢাকা সাভারস্থ গ্যান্ডার বাজারে ফুলকপি বিক্রি করেন এবং সকাল ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার জন্য ওখান থেকেই ১২০ টাকা ভাড়া চুক্তি করে কোহিনুর এক্সপ্রেস নামক একটি পরিবহনে ওঠেন। ওই পরিবহনের মাত্র ১০/১২ জন যাত্রী ছিলো। গাড়ি ছাড়ার আগে ১৩/১৪ বছর বয়সী একটি ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে ওই পরিবহনে ওঠে। এ সময় পরিবহনের সুপারভাইজার ৫ টাকার ঝালমুড়ি কিনে খাচ্ছিলো। তার খাওয়া দেখে ওই তিন ফুলকপি চাষিও ৫ টাকা করে ঝালমুড়ি কিনে খাই। ঝালমুড়ি খাওয়ার কিছুক্ষণ পর তাদের চোখ ঢুলুঢুলু করতে থাকে এবং ঘুমিয়ে পড়ে। তাদের ৩ জনের কাছে থাকা কপি বিক্রির প্রায় ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় তাদেরকে কালিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় পরিবহনের লোকজন। রাত আটটার দিকে ঢাকা থেকে কপি বিক্রি করে ফিরে আসা এলাকার কয়েকচাষি কালিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে জিয়া ও মুনছুরকে বেহুশ অবস্থায় দেখে ওই দুজনকে সাথে করে নিয়ে বাড়ি পৌছে দেয়। বাড়ি ফেরা ওই দুজনের মধ্যে জিয়ার অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরদিন সকালে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে বাসা হয়। এ দিকে একই সাথে ঢাকায় গিয়ে দুজন আহত অবস্থায় বাড়ি ফিরলেও খোকনের কোনো খোঁজখবর না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে খোকনের পরিবারের লোকজন। ওই রাতেই কালিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লোক মারফত খোজ নেয়া হলেও মেলেনি খোকনের হদিস। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর দুঃচিন্তার মধ্যদিয়ে সারাটি রাত কাটাতে হয় পরিবারের লোকজনের। পরদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খোকন বাড়ি ফিরলে পরিবারের লোকজনের দুঃচিন্তার অবসান ঘটে।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খোকন বলেন, ঢাকায় গাড়িতে উঠে ঝালমুড়ি খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আমি ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর কি হয়েছে বলতে পারবো না। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমার জ্ঞান ফেরে। তখনও আমার দু চোখে পাহাড় সমান ঘুম। চোখে ঘুমঘুমভাব নিয়ে অনেকটা টাল অবস্থায় আমি কালিগজ্ঞ বাসস্ট্যান্ডের একটি চার দোকানের দিকে হেঁটে আসছিলাম। এ সময় বাজারের নাইটগার্ড আমাকে ধরে নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে। তখনও আমার মুখ দিয়ে ঠিকমতো কথা বের হচ্ছিলো না। নাইটগার্ড আমাকে হিরো খোর ভেবে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে প্রচণ্ডভাবে মারপিট করতে থাকে। ওই চা দোকানি দৌড়ে এসে আমাকে ঠেকায়। সে বুঝতে পারে আমি অজ্ঞানর্টির খপ্পরে পড়েছিলাম। ওই চার দোকানদার আমাকে একটি বাসে তুলে দেয়। কাছে ভাড়া না থাকায় বাসের লোকজন আমাকে জোর করে জীবননগর বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। এরপর আমি আরেকটি বাসে উঠি। ওই বাসেও ভাড়া দিতে না পারায় সুপারভাইজার আমাকে দর্শনায় নামিয়ে দেয়। আমি দর্শনা থেকে একটি করিমনযোগে বাড়ি ফিরি। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অপর ফুলকপি চাষি জিয়া বলেন, আমার কাছে কপি বিক্রির টাকা ছিলো মোট ৯ হাজার, খোকনের কাছে ছিলো ৭ হাজার এবং মুনছুরের কাছে ছিলো ১৪ হাজার। জিয়া আরো বলেন, আমার একটি লেডিস চাদর ও একটি মাফলার ছিলো ওগুলো আর পাওয়া যায়নি। আমরা প্রায় ৫/৭ বছর ধরে ঢাকায় কপি বিক্রি করতে যায়। কোনো দিন এমন ঘটনা হয়নি। ওই গাড়িতে এর আগেও আমরা এসেছি। তবে আমাদের ধারণা ওই কোহিনুর পরিবহনের সুপারভাইজারের সাথে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা যোগসাজশ করে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।