নিরাপদ নয় রাজপথ। অবৈধ যানবাহন আর অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও নিশ্চিত করা যায়নি নিরাপত্তা। এবার যান-সন্ত্রাসের শিকার হলেন খ্যাতিমান সাংবাদিক আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশ্লেষক জগ্লুল আহমেদ চৌধুরী। প্রতিভাধর এ মানুষটিকে কেড়ে নিলো গণপরিবহন নামের যন্ত্রদানব। রোববার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটো। সাংবাদিক নিখিল ভদ্রকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। সাংবাদিক দীনেশ দাশকেও জীবন দিতে হয়েছে রাজধানীর রাজপথে। সমাজের সর্ব স্তরের মানুষকেই জীবন দিতে হয়েছে যন্ত্রদানবের চাকার নিচে। কিন্তু গরু-ছাগল চিনে চালকের আসনে বসে যাওয়া চালকদের নিবৃত্ত করা যায়নি। ওই সব চালকের হাতে গাড়ি তুলে দেয়া থেকেও গাড়ি মালিকদের বিরত রাখা যায়নি। ট্রাফিক আইন একেবারে না বুঝে শুধু স্টিয়ারিং ধরার যোগ্যতা দেখে কারো হাতে গাড়ি তুলে দেয়া মানে তাকে হত্যার লাইসেন্স দিয়ে দেয়া। সাংবাদিকতা জগতের মিতবাক অথচ বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটিকে প্রাণ কেড়ে নেয়া চালকটিও এই দলেরই একজন, যারা কেবল গরু-ছাগল চিনে রাস্তায় নেমেছে গাড়ি নিয়ে। যারা তাদের এ অধিকার দিয়েছে, তারাও এই হত্যার ইন্ধনদাতা। দেশে প্রতিদিন অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রোধে অনেক ব্যবস্থা নেয়া হলেও প্রতিকার নেই। কিছুদিন আগে অবৈধ গাড়ি ও অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও আবার রাস্তায় নেমেছে লক্কড়-ঝক্কর গাড়ি। অবৈধ চালকরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। মৃত্যু পরোয়ানা নিয়েই যেন গাড়ির চালকের আসনে অবস্থান তাদের। এ অবস্থা কবে দূর হবে। আর কতো নিখিল ভদ্রকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। মেধাবী ছাত্র টিটো কিংবা জগলুল আহমেদ চৌধুরীর মতো আর কতো অমূল্য প্রাণ অকালে পিষ্ট হবে রাজপথে। আর কতো মিশুক-মুনীর, তারেক মাসুদদের মতো দেশের সম্পদ অকালে ঝরে যাবে।
কিছুদিন অবৈধ যানবাহন ও অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে, তারপর আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। ঢাকার রাস্তা পথচারীবান্ধব না করেই পথচারীদের জরিমানাও হয়তো করা হবে। সিনিয়র সিটিজেনদের কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকবে না। বাস ড্রাইভাররা যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলবে বা নামাবে। নিয়ম মানবে না। আর নেপথ্যে যদি ক্ষমতাসীন কারো আশকারা থেকে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। রাজধানীর সড়কগুলোকে এখন পর্যন্ত আধুনিক করা যায়নি। জগ্লুল আহ্মেদ চৌধুরীকে যে বাসটি চাপা দিয়েছে, সেটি শনাক্ত করা যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে এ রাজপথে মৃত্যুর মিছিল আরো দীর্ঘ হবে। আমরা চাই বাসটিকে খুঁজে বের করা হোক। সংশ্লিষ্ট চালককে আইনের আওতায় আনা হোক।