দামুড়হুদায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পুলিশ পিতা কর্তৃক নিজ ছেলেকে নকল সরবরাহ : ছেলে বহিষ্কার

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পুলিশ পিতা কর্তৃক নিজ ছেলেকে নকল সরবরাহ করার ঘটনা ঘটেছে। নকল সরবরাহের অপরাধে ছেলেকে বহিষ্কার করাসহ বিষয়টি জেলার পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়লে হতবাক ও ব্যথিত হয়েছে এলাকার সচেতন অভিভাবক মহল। তাদের প্রশ্ন একজন দায়িত্ববান পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কাজ করলেন। গতকাল রোববার দামুড়হুদা মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার শেষ দিনে গণিত পরীক্ষা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, দামুড়হুদা মডেল থানার এএসআই (বর্তমানে কার্পাসডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে পোস্টিং) তপন কুমার নন্দীর ছেলে দশমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র চলতি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার্থী তনয় কুমার নন্দী গতকাল রোববার দামুড়হুদা মডেল হাইস্কুল কেন্দ্রের ১০৬ নং কক্ষে গণিত পরীক্ষা দিচ্ছিলো। পরীক্ষা চলাকালে তার পিতা ওই কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী কক্ষ পরিদর্শকের কাছ থেকে একটি লুজ সিট নেয় এবং বাইরে নিয়ে গিয়ে ১০ মার্কের একটি জ্যামিতি করে নিয়ে এসে ওই লুজ সিটটি খাতার ভেতর পিনআপ করেন। বিষয়টি কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা সমবায় অফিসার নাসরিন সুলতানা ঠিক পেয়ে খাতা চেক করেন এবং আলাদা হাতের লেখা সিট দেখে তিনি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান বেলা ১২টার দিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যান এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখে সত্যতা মেলায় ওই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার শেষ দিনে গণিত পরীক্ষা চলাকালে ১০৬ নং কক্ষে কক্ষ পরিদর্শকের উপস্থিতিতেই ওই নকল ধরা হয়। হাতের লেখার সাথে মিল না থাকায় বিষয়টি ধরা পড়ে। তিনি আরো বলেন ওই পুলিশ অফিসার পোষাক পরে প্রতিদিন কেন্দ্রে আসেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ কেন্দ্রে আমার ডিউটি আছে। ওনার ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছে এ কথাটি উনি কোনো দিন বলেননি। উনি একজন আইনের রক্ষক হয়ে এ কাজ কি করে করেন? বহিষ্কৃত ছাত্রের রোল নং ৪০২৫ বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান বলেন, আমি পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কেন্দ্র পরিদর্শক ও কক্ষ পরিদর্শকের উপস্থিতিতেই ওই পরীক্ষার্থীর কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনেছি। তিনি প্রতি পরীক্ষার দিন আসেন এবং ছেলেকে নকল সরবরাহ করেন বলে ওনার ছেলে আমাদেরকে জানিয়েছে। ছেলে বলেছে আমার বাবা প্রতি পরীক্ষার দিন এসে আমাকে নকল দিয়ে যায়। ওই পুলিশ অফিসার আমার সাথেও মিথ্যা কথা বলেছেন। আমি দু দিন পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে ওনাকে দেখে জিজ্ঞাসা করা হলে উনি বলেছেন স্যার আমার এ কেন্দ্রে ডিউটি আছে। তিনি আরো বলেন, উনি নিজ ছেলেকে নকল সরবরাহ করে নিজের ছেলে ছেলের ভবিষ্যত নষ্ট করছেন উনি কেমন পিতা এবং দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার বিষয়টি কি ভাবা যায়?

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় আমি মর্মাহত। সে আমাকে না জানিয়ে কার্পাসডাঙ্গা থেকে দামুড়হুদায় আসাটা তার ঠিক হয়নি। একজন দায়িত্ববান পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কাজ করলো এ প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার সচেতন অভিভাবক মহল।

Leave a comment