মারধরের ঘটনায় মামলা : সংঘর্ষের আশঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার খাসকররা এলাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম এখন চরমে। চড়া সুদে নেয়া টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই হচ্ছেন নিঃস্ব। ভিটেমাটি বিক্রি করা টাকা সুদ ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা তুলে দিয়েও পরিশোধ হচ্ছে না সুদের বোঝা। অপরদিকে প্রতিনিয়তই দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এমনই ঘটনায় শনিবার দাদন ব্যবসায়ী সাফায়েতের হাতে মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন মোশা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
খাসকররা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোশারফ হোসেন মোশা বাদী হয়ে গতকাল রোববার আলমডাঙ্গা থানায় একটি মামলাটি দায়ের করেন। আসামিরা হচ্ছে- দাদন ব্যবসায়ী সাফায়েত হোসেন ও তার সহযোগী জিয়া। মোশাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অপচেষ্টা ও চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে। মোশারফ হোসেন মোশা অভিযোগ করেন, গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সাফায়েত শুধু তাকে মারধরই করেনি তার কাছে চাঁদা দাবিও করেছিলো। ওই ঘটনার তিন দিন আগে রাতে সাফায়েত ও তার লোকজন মোশার বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করে। তার পরিবার ও প্রতিবেশীরা বিষয়টি অবগত। আসামিদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টামূলক শাস্তি ও এলাকায় দাদন ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত ৮/৯ বছর ধরে খাসকররা এলাকায় দাদন ব্যবসা ব্যাপকতা লাভ করেছে। দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জীবন জীবিকার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সঙ্কটকালীন সময়ে অনেক বিত্তবান ব্যক্তি গ্রহণ করেন দাদন। দাদনের চাহিদা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দাদন ব্যবসায়ীর সংখ্যা। সাফায়েত, জিয়া, সেকেন্দার, হাসিবুল, শুকুর আলী, সাইদ, শাহীন, রিপন, মিলন ও লালনসহ কয়েকজন এলাকার চিহ্নিত দাদন ব্যবসায়ী। তারাই মূলত ওই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। এদের অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে এক সময়ের জিরো হলেও বর্তমানে হিরো। অর্থাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ অবস্থা।
ভুক্তভোগী সূত্রে আরো জানা গেছে, দাদন ব্যবসায়ীরা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। এক লাখ টাক দাদন নিলে তা থেকে প্রথমেই কেটে নেয়া হয় সাড়ে বার হাজার টাকা। অর্থাৎ এক লাখ টাকা নিয়ে একজন ব্যক্তি হাতে পান ৮৭ হাজার ৫শ টাকা। দাদন ব্যবসায়ীকে প্রতিমাসে সুদ হিসেবে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। নিরাপত্তা হিসেবে টাকা গ্রহণকারীকে দাদন ব্যবসায়ীর কাছে জমা দিতে হয় জমির দলিল। সময়মতো টাকা ফেরত দিতে না পেরে সুদ আসলের বিরাট বোঝার সম্মুখিন হন অনেকেই। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় দাদন ব্যবসায়ীরা। তারা জমির দলির অনুযায়ী ভুক্তভোগীদের জমি দখল করে নেন। সুদের কবলে পড়ে এমন জমি হারানো মানুষের লাইন এখন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। তবুও দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসছেন অনেকেই। তাই প্রশাসনের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্যদিয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি করেছে ভুক্তভোগীসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, দাদন ব্যবসায় টাকা আদায় কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যায় খাসকররা বাজারে মোশারফ হোসেন মোশা ও নিকাজ রেজিস্ট্রার হাসান হাবীব মনজুরকে মারধর করে সাফায়েত ও তার সঙ্গীয় কয়েকজন। এ ঘটনায় এলাকায় দু পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাফায়েতসহ কয়েকজনের কাছ থেকে দাদন নেনহাসান হাবীব মনজুর। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবসা গ্রহণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।