চুয়াডাঙ্গায় বাল্যবিয়ে হচ্ছেই : নেপথ্যে রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্তকারীদের উৎপাত

খাইরুজ্জামান সেতু/উজ্জ্বল মাসুদ: একদিকে চলছে বাল্যবিয়ে, অপরদিকে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার বিশেষ উদ্যোগে চলছে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ। এরপরও বাল্যবিয়ে শূন্যের কোটায় নেয়া যাচ্ছে না। কেন? অভিভাবকদের শুধু সচেতনতাই নয়, রাস্তা-ঘাটে স্কুলছাত্রীদের উত্ত্যক্তও বাল্যবিয়ের জন্য কম দায়ী নয়। বাল্যবিয়ে মানে নিজের হাতে নিজের সন্তানের ভবিষ্যত ধ্বংস করা। চরম এ সত্য জেনেও অনেক অভিভাবক তার কন্যাকে উত্ত্যক্তকারীদের উৎপাত ও অপ্রাপ্ত বয়সে ফুঁসলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে হয়রানির শঙ্কামুক্ত হতেই বাল্যবিয়ের পিঁড়িতে বসাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অনেকেরই অভিমত।

সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় চলতি বছরে বেসরকারি হিসেবে প্রায় ৫শ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ঠেকাতে না পারা বাল্যবিয়ের মধ্যে শতাধিক বিয়ে তলাক হয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক তালাকপ্রাপ্ত ছেলেমেয়ের অন্যত্রে বিয়ে হয়েছে। আর প্রায় অর্ধশতাধিক তালাক প্রাপ্ত ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়নি। এর মধ্যে মেয়ের সংখ্যাই বেশি। প্রশাসনের পাশাপাশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জোর ভূমিকা রাখছে স্থানীয় বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এর মধ্যে অন্যতম পল্লি উন্নয়ন সংস্থা পাস। পল্লি উন্নয়ন সংস্থা পাস কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। প্রশাসন নিয়ে আমরা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করছি। পরে আবার চুরি করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এখন অভিভাবকরা কৌশল অবলম্বন করছে। যেমন এলাকা ছেড়ে বিয়ে দিচ্ছে অন্য এলাকায় নিয়ে গিয়ে এবং রাতের আঁধারে কউকে কিছু না জানিয়ে। আর এ বাল্যবিয়ের কারণে বাড়ছে বহুবিয়ে, নারী নির্যাতন, সন্তান অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে, মা ও শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও নারী শিক্ষার হার হ্রাস, টাকা নষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। আর এ বাল্যবিয়ের কালো থাবার শিকার হচ্ছে বিশেষ করে মেয়েরা বেশি। কেন বাল্যবিয়ে? চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর বেশ কয়কটি এলাকার বেশ কিছু অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলে মেয়ে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যাচ্ছে না। দৌলাতদিয়াড় ব্রিজের অদূরে, রাহেলা খাতুন স্কুলের আশেপাশে, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের যাওয়া-আসার পথে কয়েকটি মার্কেটের সামনে যেমন ছদ্মবেশে উত্ত্যক্তকারী যুবকদের উৎপাত লেগেই থাকে, তেমনই বেলগাছিসহ কয়েকটি এলাকায় উত্ত্যক্তকারীদের নিরাপদ মোড় রয়েছে বলে অনেকেরই অভিমত। এসব বিষয়ে অভিভাবকদের তেমন কেউই থানা-পুলিশ করতে চান না। কারণ মেয়ের দুর্নাম বা রাস্তায় চলতে গিয়ে নিজেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে ভয়।

বাল্যবিয়ের কারণে তালাকপ্রাপ্ত হয়েছে এমন কয়েকটি মেয়ে ও তাদের অভিভাবকদের সাথে সরেজমিন কথা বলে জানা গেছে, তার হয়েছে নির্যাতনের শিকার, আবার কেউ অবহেলার শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে বাল্যবিয়ের করাণেই হয়েছে এমনটি অকপটে স্বীকার করলেন মেয়ে ও অভিভাবকরা।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন জানান, আমরা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়াও যখন যেখানে বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া যায়, তখন সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।